শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪,

১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪,

১৩ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

উপকূলের বিলুপ্তপ্রায় চিত্রা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন

শুভ্র শচীন, খুলনা

প্রকাশিত: ২২:০৬, ২ জুলাই ২০২১

Google News
উপকূলের বিলুপ্তপ্রায় চিত্রা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন

কৃত্রিম প্রজনন করা চিত্রা মাছ

উপকূলীয় অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় চিত্রা মাছের কৃত্রিম প্রজনন এবং পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোনাপানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। খুলনার পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রে মা মাছ প্রতিপালন করে এ সফলতা পেয়েছেন তারা।

ওই কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং গবেষক দলের প্রধান ড. লতিফুল ইসলাম বলেন, গবেষণার জন্য চার বছর আগে খুলনার শিবসা নদী এবং সুন্দরবন সংলগ্ন খাল থেকে চিত্রা মাছের পোনা সংগ্রহ করেন তারা। পরবর্তীতে কেন্দ্রের পুকুরে ভাসমান খাবারে অভ্যস্তকরণের মাধ্যমে প্রজননক্ষম মাছে পরিণত করা হয়।

ড. লতিফুল বলেন, স্বাদুপানির মাছের কৃত্রিম প্রজননের তুলনায় লোনাপানির মাছের কৃত্রিম প্রজনন কষ্টসাধ্য বিষয়। লোনাপানির মাছের প্রজননে পারিবেশিক ও পারিপার্শ্বিক অনেকগুলো নিয়ামক বিবেচনায় নিতে হয় এবং রেনুর প্রাথমিক খাদ্য হিসাবে লাইভ ফিড প্রয়োজন হয় যা উৎপাদন কষ্টসাধ্য।

প্রজননক্ষম মাছ উৎপাদন, প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ, প্রজননের জন্য উপযুক্ত লবণাক্ততা, উপযুক্ত হরমোন নির্বাচন ও ডোজসহ বিভিন্ন বিষয় নিরূপণের পরেই এ বিলুপ্তপ্রায় মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা এসেছে।

তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন মাছের মধ্যে চিত্রা অন্যতম। একসময় এ মাছ সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী, খাড়ি ও ঘেরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। পরিবেশ বিপর্যয় ও সংরক্ষণের অভাবে মাছটি প্রায় হারিয়ে যায়। অঞ্চলভেদে মাছটি পায়রা, বিশতারা, বোথরাসহ বিভিন্ন নামেও পরিচিত। মাছটি দেখতে সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু।

গবেষক দলের অন্যতম বিজ্ঞানী শাওন আহম্মেদ জানান, চিত্রা মাছ দৈর্ঘ্যে সাধারণত ৩৫ সেন্টিমিটার ও সর্বোচ্চ ওজন দেড় কেজি। একই বয়সী পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছ অপেক্ষা আকারে ছোট হয়ে থাকে।

নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জীবদ্দশার দ্বিতীয়বর্ষে কিছুমাছ প্রজননক্ষম হলেও তৃতীয়বর্ষে অধিকাংশ (৮০শতাংশ) মাছ প্রজননক্ষম হয়। এসময় পুরুষ মাছের সর্বনিম্ন ওজন ৮০ গ্রাম ও স্ত্রী মাছের ওজন ১৮০ গ্রাম হয়ে থাকে। একটি প্রজননক্ষম চিত্রা মাছ প্রতি গ্রাম দেহ ওজনের জন্য ২০০০-২৫০০টি ডিম ধারণ করে থাকে।

গবেষক দলের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ওয়াসীম জানান, চিত্রা মাছ স্বভাবে সর্বভুক এবং এর প্রজনন মৌসুম হচ্ছে এপ্রিল-জুলাই। পরিপক্ক মাছকে হ্যাচারিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হরমোন প্রয়োগ করে প্রজননে উদ্দীপ্ত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের পুকুরের সংগ্রহ করা মাছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই প্রজননের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু এ বছর অতি খরাজনিত কারণে মাছের পরিপক্কতা আসতে বিলম্ব হলেও ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা চালানোর পর সফলতা পাওয়া গেছে।

হ্যাচারিতে এখন সর্বমোট পাঁচ ব্যাচের পোনা রয়েছে। প্রথম ব্যাচের উৎপাদিত পোনার বয়স এখন ৩৫ দিন এবং সর্বশেষ ব্যাচের রেনুর বয়স ৬ দিন। উৎপাদিত রেনুগুলোকে প্রাথমিকভাবে গ্রীন এ্যালজি এবং রটিফার জাতীয় খাবার দিয়ে বড় করা হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে আর্টেমিয়া ও অন্যান্য রেডি ফিড প্রয়োগ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, একসময় চিত্রা মাছ প্রচুর পাওয়া গেলেও এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। আমাদের বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে বিলুপ্তপ্রায় এ মাছের প্রজনন সফলতা অর্জন করেছেন। চিত্রা মাছের প্রজনন সাফল্য বাংলাদেশকে মেরিকালচার তথা সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

ড. ইয়াহিয়া বলেন, সুস্বাদু এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবিত হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে এখন এর পোনা উৎপাদন, প্রাপ্যতা ও চাষের প্রসার ঘটবে।

চিত্রা মাছ সর্বভূক হওয়ায় উপকূলীয় ঘেরে অন্যান্য মাছের সাথেও চাষ করা যাবে। এছাড়া অ্যাকোরিয়ামে ব্যবহারের জন্যও এ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের