
মিষ্টি আলুর ৫৪০টি জাত নিয়ে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে চলেছে গবেষণা। অবশেষে তিনটি জাত গ্রহণ করা হয়। কেন এত কর্মযজ্ঞ? গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই তিনটি জাত ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধে কাজ করবে। চিকিৎসকরাও বলছেন, এ দেশে এটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন।
নামই যার ‘মিষ্টি আলু’, যা খাওয়ার কথা শুনলেই আঁতকে উঠতেন ডায়াবেটিক রোগীরা, এবার তাঁদের একটা হিল্লে হলো। নতুন এই তিন জাতের মিষ্টি আলু এখন রীতিমতো ‘ওষুধ’ হিসেবে খাবেন তাঁরা। এই ওষুধ ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক হবে।
উদ্ভাবিত নতুন এই তিন জাতের মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে প্রতিরোধী উপাদান থাকায় মানবদেহে ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-২-এর প্রধান ডা. খুরশেদ আলমও।
উদ্ভাবিত আলুর জাতগুলোর নাম হলো ‘বাউ মিষ্টি আলু-৭, ৮ ও ৯’। সুদীর্ঘ গবেষণার পর এগুলো উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের একদল গবেষক। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ওই বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান। বাকৃবির ২০-৩০ জন শিক্ষার্থীও স্বেচ্ছাশ্রমে যুক্ত ছিলেন এই গবেষণায়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, নতুন এই জাতগুলো আগের জাতগুলোর তুলনায় বেশি পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গবেষণার জন্য বীজ আনা হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু থেকে। জাতগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে বাকৃবি চত্বর ছাড়াও ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা ও ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে। মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় কৃষকরা সহায়তা করেছেন। অবশেষে গত মাসে নতুন জাতগুলোর অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।
নতুন জাত তিনটি সাধারণ মিষ্টি আলুর চেয়ে তিন গুণ বেশি ফলনশীল। প্রতিটি গাছেই উৎপাদন হবে এক থেকে দেড় কেজি আলু। সারা বছর চাষযোগ্য এই আলুর ফলন পাওয়া যাবে তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে।
এ বিষয়ে গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক আরিফ হাসান খান বলেন, ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের সদর দপ্তর পেরুর রাজধানী লিমা থেকে বীজ এনে পলিক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়। এরপর সাড়ে চার বছরের গবেষণায় মিষ্টি আলুর রঙিন তিনটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। এসব আলু দেখতে বেগুনি, কমলা ও গোলাপি রঙের।
তিনি জানান, এসব মিষ্টি আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ভাতের চেয়ে কম। যে জন্য ডায়াবেটিস রোগীরা এই আলু খেতে পারেন। এসব আলুতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্থোসায়ানিন, কেরাটিন ও ফাইবার রয়েছে। এগুলো নিয়মিত খেলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। নতুন জাতের আলুগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর চাষাবাদ পদ্ধতিও খুবই সহজ, ফলনও ভালো। কৃষকরা এসব আলু চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। এ ছাড়া দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণেও সহায়ক হবে।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-২-এর প্রধান ডা. খুরশেদ আলম বলেন, উদ্ভাবিত মিষ্টি আলুগুলোতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্থোসায়ানিন, কেরাটিন ও ফাইবার রয়েছে। ফলে মানবদেহে ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম