
চিন্তা করলেই যদি হাত-পা চলে, কিংবা মস্তিষ্কের সংকেতেই যদি বোঝা যায় অসুস্থতার গোড়াটা কোথায়—তবে চিকিৎসার কাজটা অনেক সহজ হয়ে আসবে। চীনে সেই কল্পনাই বাস্তব হচ্ছে ‘ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’ বা বিসিআই প্রযুক্তির মাধ্যমে। চিকিৎসা থেকে প্রযুক্তি ও ভোক্তা খাত—সবখানেই বাড়ছে এই প্রযুক্তির ব্যবহার। বাজারে এর প্রবৃদ্ধিও বিস্ময়কর। ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের বাজারে বিসিআই-এর আকার ৫৫০ কোটি ইউয়ান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর ইনফরমেশন ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্টের গবেষণা কর্মকর্তা হুয়াং ওয়েনহোং বলেন,
‘বিসিআই প্রযুক্তিতে নানা উদ্ভাবনী অর্জন ঘটছে। চিকিৎসা ছাড়াও শিল্প, শিক্ষা ও ভোক্তা খাতে এর ব্যবহার বাড়ছে। এই বিস্তৃত ব্যবহারই বাজারকে আরও সম্প্রসারিত করবে।’
তবে এই প্রযুক্তির মূল চ্যালেঞ্জ হল মানুষের মস্তিষ্ক থেকে আসা জটিল বৈদ্যুতিক সংকেতগুলোকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে কার্যকর নির্দেশনায় রূপান্তর করা।
শানতোং প্রদেশের চিনানে একটি গবেষণাগারে দেখা গেল, পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক রোগী শুধু চিন্তা করেই চালাতে পারছেন এক্সোস্কেলেটন—যা দিয়ে তিনি হাঁটছেন, পা তুলছেন।
চংখ্য অ্যাডভান্সড টেকনোলজি কোম্পানির প্রকৌশলী ওয়াং শংচ্য বলেন, ‘আমরা ইইজি ক্যাপ ও ইলেকট্রোড ব্যবহার করে মস্তিষ্কের বেশ সূক্ষ্ম সিগন্যাল বের করি, তারপর তা আমাদের নিজস্ব তৈরি অ্যাম্প্লিফায়ারে পাঠাই। সফটওয়্যারে সেই সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারি রোগী কী ভাবছেন, এরপর সেই অনুযায়ী চিকিৎসায় সহায়তা করি।’
ছেংতু শহরের একটি মেডিকেল গবেষণাগারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তির সাহায্যে বিসিআই উন্নয়নের কাজ চলছে। উদ্দেশ্য—বিসিআই যেন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আসে।
গবেষকরা জানালেন, তারা এআই ব্যবহার করে বিসিআই প্রযুক্তিকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান। এ সেবাটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে এটাই তাদের লক্ষ্য।
সম্প্রতি ছেংতুর ওয়েস্ট চায়না হাসপাতালে সার্জনরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক রোগীর ব্রেইন টিউমার অপসারণ করেছেন। বিসিআইর সাহায্যে নিউরন সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে সুস্থ কোষ আর টিউমার কোষ আলাদা করতে পারি, এতে অনেক বেশি নিখুঁতভাবে টিউমার অপসারণ করা যায়।
মানবমস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সরাসরি সংযোগ—এ যেন এক নতুন ভবিষ্যৎ। আর সেই ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দিচ্ছে চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন জানালা।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম