ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ও সেনা সমাবেশের পর এবার ভেনেজুয়েলাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। দেশটির অভ্যন্তরে সেনা সদস্য, ভারী অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন শুরু হয়েছে।
বুধবার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় বুধবার পর্যন্ত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সামরিক মহড়া পরিচালনা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাম্রাজ্যবাদী হুমকির’ প্রতিক্রিয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহড়ায় নিয়মিত সামরিক ইউনিটের পাশাপাশি রিজার্ভ বাহিনী বলিভারিয়ান মিলিশিয়া অংশ নিচ্ছে। এই বাহিনী গঠন করা হয়েছে সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে। দেশটির প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজের আমলে বাহিনীটি গঠন করা হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নির্দেশে মহড়া শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, কমান্ড, কন্ট্রোল ও যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধিই এই মহড়ার লক্ষ্য।
বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যা দিনে দিনে বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন নৌ বাহিনী জানায়, তাদের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ ইউএস সাউদার্ন কমান্ডের আভিযানিক এলাকায় পৌঁছেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ গত মাসের শেষ দিকে ইউরোপ থেকে ফোর্ডকে ক্যারিবীয় সাগরে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই রণতরীর সঙ্গে আছে নয়টি বিমান স্কোয়াড্রন, দুটি আর্লে বার্ক-ক্লাস গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার (মার্কিন নৌ বাহিনীর বিশেষ যুদ্ধজাহাজ), সমন্বিত আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কমান্ড জাহাজ এবং ৪ হাজারের বেশি নাবিক।
গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে বেশ কয়েকটি নৌযানে বিমান হামলা চালায়। তাদের দাবি এসব যানে মাদক পাচার করা হচ্ছিল। এই পাচার রোধ করতেই অঞ্চলটিতে সামরিক সমাবেশ জোরদার করা হয়েছে।
তবে কারাকাস (ভেনেজুয়েলার রাজধানী) মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হলো মাদুরো সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো। ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও ব্যক্তিগতভাবে এ কথা স্বীকার করেছেন। গত মাসে ট্রাম্প জানান, তিনি ভেনেজুয়েলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। এর আগেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভেনেজুয়েলার ভেতরে সামরিক হামলা চালানোর সম্ভাবনা বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরে বলেন, এখনই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেনা মোতায়েনকে মাদুরোর বৃহত্তর ‘স্বাধীনতা পরিকল্পনা’র অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন। এই কৌশলের লক্ষ্য হলো, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মিলিশিয়া ও পুলিশ বাহিনীকে দেশ রক্ষার জন্য একযোগে সক্রিয় করা।
ভেনেজুয়েলার নিয়মিত সামরিক বাহিনী বলিভারিয়ান ন্যাশনাল আর্মড ফোর্সেসের বর্তমান সদস্য প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার। মাদুরো দাবি করেছেন, স্বেচ্ছাসেবী মিলিশিয়া মিলিয়ে তাদের ৮০ লাখের বেশি রিজার্ভ সদস্য আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই সংখ্যার সত্যতা ও প্রশিক্ষণের মান নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছেন।
সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক কর্মকাণ্ডের ঘাঁটি ও ক্যারিবীয় সাগরের দ্বীপ পুয়ের্তো রিকোতেও ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, সেখানে কমপক্ষে তিনটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনও মোতায়েন হয়েছে। এসব সামরিক সরঞ্জাম ছাড়াও পুয়ের্তো রিকোতে ৫ হাজার মার্কিন সেনা সদস্য অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

