দেশের অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদের জায়গাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আবারও মনে করিয়ে দিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তার ভাষায়, উৎপাদন থেকে বিপণন—সব মিলিয়ে এই খাতের নীরব অবদান এখন দেশের প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আর এই উৎপাদন যেন নির্বিঘ্নে চলতে পারে, এটিই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বুধবার সকালে আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, দেশের মোট জিডিপিতে প্রাণিসম্পদের অবদান ২ শতাংশ। কৃষির ভেতরে অবদান ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। পোল্ট্রি খাতেই সরাসরি–পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন ৬০ লাখ মানুষ, যাদের বড় অংশ নারী। এই উৎপাদনচক্রকে সচল রাখতে না পারলে প্রান্তিক মানুষের জীবন ও খাদ্যনিরাপত্তা দুইটিই ঝুঁকিতে পড়বে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রাণিসম্পদ খাত আজ শুধু আমিষের যোগান নয়, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, বাণিজ্যিক খামার, সহায়ক শিল্প আর বৈদেশিক মুদ্রার উৎস—সব ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান ভূমিকা রাখছে।
তিনি জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বেসরকারি বিনিয়োগের নানা কার্যক্রম মিলিয়ে দেশে ডিম, দুধ ও মাংস উৎপাদন বেড়েছে, ফলে আমিষের ঘাটতি অনেকটাই কমেছে। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়—জলবায়ু পরিবর্তন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স, প্রাণী–মানুষের পারস্পরিক সংক্রমণ, উদীয়মান রোগ এবং প্রাণিজ খাদ্যের ঘাটতি—এসব বিষয় এখনই গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিয়মিত মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি বাড়ানো হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু আমদানি করতে হয়নি—এ সাফল্যকে তিনি প্রান্তিক খামারিদের কঠোর পরিশ্রমের ফল বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠে তিন দিনব্যাপী দেশের সবচেয়ে বড় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা বিনা খরচায় দেখতে পারবেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, ঘোড়া, খরগোশ, কবুতর, কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে নানা পাখি–পশুপাখি।
সঙ্গে আছে দুধ–মাংসজাত খাবারের স্টল, ঐতিহ্যবাহী রেসিপি, প্রাণিপালনের আধুনিক প্রযুক্তির প্রদর্শনী ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
সারাদেশের খামারিরা অংশ নিচ্ছেন এবারের আয়োজনে। লক্ষ্য—মানুষকে এই খাতের সম্ভাবনা বোঝানো এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান জানান, এবারের সপ্তাহ দেশজুড়ে একইসঙ্গে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উদযাপিত হচ্ছে। দেশের উন্নত জাতের প্রাণিসম্পদ একসঙ্গে দেখার এমন আয়োজন আগে হয়নি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

