শোকে স্তব্ধ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি। হাদিশূন্য তার বসতভিটায় ভিড় করছেন চেনা-অচেনা বহু মানুষ। শোকের মাতম চলছে শ্বশুর বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জেও। শেষবার মত দেখার অপেক্ষার প্রহর গুনছে এখন গ্রামবাসী।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, হাদির ইচ্ছে ছিলো তাকে যেন তার বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। তবে সে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নিহত হাদির ভগ্নপতি আমীর হোসেন কে জানান, হাদির ইচ্ছে ছিল তাকে তার বাবার পাশে সমাহিত করার।
টিনসেড ঘরেই জন্ম নিয়েছিলেন সৈয়দ শরীফ ওসমান হাদি। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হাদির বেড়ে ওঠা এখানেই। তবে এই ঘরে হাদি যেন এখন কেবলই, ছবি। ঘাতকের গুলিতে চিরতরে বিদায় নেয়ায়, শূন্যতায় ছেয়ে তার জন্মভূমি।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাসমহল পৌর এলাকায় ১৯৯৩ সালের জন্ম নেয় ওসমান হাদি। বাবা মাওলানা আবদুল হাদি ও মা তাসলিমা হাদির ঘরে ৬ সন্তানের মধ্যে হাদি ছিলেন সবার ছোট।
এলাকাবাসী জানান, শৈশব থেকেই হাদি ছিলেন প্রতিবাদের এক কণ্ঠস্বর। নেছারাবাদ এন এস কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম শেষ করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমির পাঠ চুকান। স্বজনদের পাশাপাশি গ্রামবাসীর কাছে হাদি যেন কেবল একটি নাম নয়, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়ায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি হয়েছেন। তাইতো তার নিহতের ঘটনা মানতে পারছে না কেউই। কেউ অঝরে, কেউ কাঁদছেন গুমরে গুমরে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই চেনা, অচেনা বহু মানুষ ভিড় করেন হাদির এই ভাঙাচুরা ঘরের সামনেই। বাড়িতে থাকা হাদির বোন আর বোনের পরিবারকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা পাচ্ছে না আগতরা। এ সময় কেউ স্মৃতি আওড়ান, কারো মুখে হাদি হত্যার বিচারের দাবি।
অপরদিকে, হাদির শ্বশুরবাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জেও চলছে শোকের মাতম। অল্প বয়সে স্বামী হারা স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতে উদ্বিগ্ন স্বজনরা। দাবি, আর যেন কোন মায়ের কোল খালি না হয় হাদির মত।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান ওসমান হাদি। ঢাকা মেডিকেল ও এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

