
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সোমবার (২ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্বে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক করে।
বৈঠক বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, কমিউনিস্ট পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ ৩০ দল অংশ নেয়।
বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কীভাবে আলোচনা হবে, কখন হবে, আমাদের সঙ্গে সে বিষয়ে কথা হয়েছে। আমরা ও ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শুনেছি। আমরা কিছু বিষয়ে একমত, দ্বিমত, আবার আংশিক একমতও হয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হতে চান। তবে আমরা সব দলের সঙ্গে একমত হতে পারবো না। এটাই রাজনীতির সৌন্দর্য। আমরা সেসব বিষয়েই একমত হবো, সিদ্ধান্ত নেবো, প্রস্তাব করবো, যেসব বিষয় গৃহীত হলে জাতির জন্য কল্যাণ হবে।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা মনে করি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ফেলা সম্ভব। কিছু কিছু সংস্কার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেই করা সম্ভব৷ সংবিধান সংস্কার ছাড়া অধিকাংশ সংস্কার সম্ভব। বাকি সব প্রধান উপদেষ্টা বিবেচনা করবেন।
তিনি বলেন, সংবিধান সংক্রান্ত সংস্কার নিয়ে একটা সনদে বা ঐক্যমত্যে আসা সম্ভব। যা বাকি থাকবে, তা নির্বাচনের পর হবে। আমার কাছে মনে হয়, উনারা যথেষ্ট আন্তরিক। তবে তারা অনেক সময় ক্ষেপণ করে ফেলেছেন, আর সময় ক্ষেপণ উচিত না। প্রধান উপদেষ্টা বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে শুনেছেন। সংবিধানের যেসব বিষয় সংশোধন প্রয়োজন তাও আগামী এক মাসের মধ্যেই করা সম্ভব।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
জুনের মধ্যেই আলোচনা করে জাতীয় সনদ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছে দলটি। তাদের মতে, সরকারর উচিত হবে বিতর্ক থেকে বের হতে, যেহেতু অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায়। সরকারের উচিত হবে এটা বিবেচনা নেয়া। আলোচনা করে সমাধানে আশা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
দলটির প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা তিনটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। জুলাই ঘোষণাপত্র যেন ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়া হয়, তার দাবি জানিয়েছি। জুলাইয়ে এক বছর হবে গণঅভ্যুত্থানের। আমরা তাই জুলাইয়ের মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণার দাবি জানিয়েছি। জুলাই সনদ দেবার পর আমরা নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কথা বলবো। নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন নিয়ে কথা বলেছি। ইসি নিয়ে আমাদের আস্থা নেই, তা পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
দলটির নেতারা বলেন, আমরা ভেবেছিলাম কোন কোন দল ঐক্যমত্য হয়েছে, তা জানাবে। কিন্তু আমরা তা জানতে পারিনি। আমরা তিন প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা ৯ মাসে এখনও অনেক কিছুই পরিষ্কার না। সংস্কারের রোডম্যাপ, হাসিনার বিচার চেয়েছি। নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটা স্পেসিফিক টাইম চেয়েছি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
আমরা সংস্কার চাই, তবে সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ চাই না বলে জানিয়েছে দলটি। পাশাপাশি বিচার চাই, তবে কালক্ষেপণ নয়। নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় চেয়েছি। আমরা কোনো আগ্রাসী শক্তির মধ্যে পড়তে চাই না।
কমিউনিস্ট পার্টি
ডিসেম্বর কেন, তার আগেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে দলটি। তাদের মতে সংস্কার আর নির্বাচন এক সঙ্গে চলতে পারে।
খেলাফত মজলিস
নির্বাচনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেয়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। তাই জুলাই মাসের মধ্যেই ঐকমত্য কমিশনের কাজ শেষ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ইসলামী আন্দোলন
বাইরের কিছু শক্তির জন্য ড. ইউনূস গলার কাঁটা বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নেতারা। তাদের মতো, বর্তমানে দেশের যে অবস্থা, তাতের নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তাই আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন চেয়েছে দলটি।
গণসংহতি আন্দোলন
বিচার, সংস্কার আর নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে দলটি। ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন নিয়ে গেলে তা সরকারকেই পরিষ্কার করতে হবে বলে জানিয়েছে দলটির নেতারা। তাদের মতে, নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। কেননা মানুষ সংশয়ে আছেন নির্বাচন আদৌ হবে কী না। এ সংশয় সরকারই দূর করতে পারে।
এবি পার্টি
তিন বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে দলটির নেতারা বলেন, ঐকমত্য কমিশনের ফ্রেমওয়ার্ক করা উচিত ছিল। তারা কী লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। গত ১০ মাসে এই সরকারের একটি আমলনামার খতিয়ান দেয়া উচিত জনগণের সামনে। নির্বাচনের ডেটলাইন নিয়ে তর্ক হচ্ছে, আমরা বিশ্বাস করি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে একটি দিন তারিখ আসা সম্ভব।
জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার করতে হবে। তার পর জুলাই সনদ হবে, সেখানে আমরা সাইন করবো।
তিনি কিছু বিষয়ে দ্বিমত আছে দলগুলোর মাঝে। সেগুলো নিয়ে আমরা কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছতে পারবো বলে আশা করি। জুলাইয়ের মধ্যে একটি সনদ হবে, তাতে আমরা সবাই স্বাক্ষর করবো বলেছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থা রাখছি। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই নির্বাচনের তারিখ দেবেন বলে আশা করি। তাদের মতে, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে সময় নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যৌক্তিক। পাশাপাশি প্রবাসীদের ভোটে অংশ নেবার সুযোগ করে দেবার দাবি জানিয়েছি।
গণঅধিকার পরিষদ
তিনটি রাজনৈতিক দল বাদ বাকি সব দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি বলেন, নিক্কেই এশিয়া ফোরামে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে একটি বক্তব্য এসেছে, যে একটি মাত্র দল ডিসেম্বর এর আগে নির্বাচন চেয়েছে, যে বক্তব্যটি সঠিক নয়।
দলটির প্রধান বলেন, সব রাজনৈতিক দলই মোটাদাগে নির্বাচন চেয়েছে। আমরা মনে করি সংস্কার নিয়ে একটি ঐকমত্য হয়েছে। কিছু সংস্কার অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা যাবে, কিছু সংস্কারের জন্য পার্লামেন্ট লাগবে। তাই নির্বাচন দরকার।
তিনি বলেন, জুলাই সনদকে জাতীয় সনদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে গণভোটের মাধ্যমে এর একটি ভিত্তি দিতে পারি।
নুরুল হক নুর বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্যকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা আপত্তি তৈরি হয়েছে। ফলে উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠনটাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে ১২ দলীয় জোট।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম