
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বিলকাঠিয়া গ্রামের কৃষক টুটুল শেখ এখন চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তার আদরের ফ্রিজিয়ান ষাঁড় ‘কালো পাহাড়’ নিয়ে। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে সন্তানের মতো লালনপালন করা এ ৩০ মণের গরুটির এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতা মেলেনি। অথচ ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ৩ দিন।
টুটুল শেখ, তার স্ত্রী মিরানা খাতুন ও ছেলে সুরুজ আলী শেখ মিলে এ গরুটি লালনপালন করেছেন শুরু থেকে। টিনশেডের মেঝেপাকা ঘরে রাখা হয় গরুটি, আর দিনে ঘরের সামনের বরইগাছে বেঁধে রাখা হয়। কালো রঙের বিশাল দেহের এই ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি দিনে প্রায় এক হাজার টাকার খাবার খায়। অতিরিক্ত গরমে তাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা হয়। প্রতিদিন চার-পাঁচবার গোসল করানো হয় গরুটিকে। পরিবারের সদস্যরা সারাক্ষণ গোয়ালঘরে পড়ে থাকেন যেন গরুটির দেখভাল ঠিকমতো হয়।
গত বছর কোরবানির ঈদের সময় এই গরুটির দাম বলেছিলেন একাধিক ব্যাপারী—৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবার এখন পর্যন্ত কেউ দাম বলেনি। অথচ কৃষক টুটুলের প্রত্যাশা ছিল গরুটিটি ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। কারণ, গরুটির উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট, আর লেজ থেকে মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৮ ফুট। ওজন প্রায় ১২০০ কেজি বা ৩০ মণ।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন মিলে গোয়ালঘর থেকে গরুটিকে বের করে উঠানের বরইগাছে বেঁধে দিচ্ছেন। কুচকুচে কালো ও বিশাল দেহের গরুটি অনেক লাফঝাঁপ করছিল। তরতাজা এ গরুটিকে দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমায় স্থানীয়রা।
স্থানীয় এক প্রবীণ কৃষক আজিজ মোল্লা বলেন, এতো বড় গরু আগে কখনও এই এলাকায় হয়নি। পাহাড়ের মতো বিশাল গরুটি দেখতে প্রতিদিনই লোকজন ছুটে আসে। আমিও প্রায় দিনই আসি। তবে এবার কেনার লোক নেই।
কৃষক লিটন শেখ (টুটুল) বলেন, আমরা কৃষক মানুষ, ঘোরপ্যাঁচ বুঝি না। প্রতিদিনই কাঁচা ঘাস, খর, গম, ছোলার ভুসি ও প্রাকৃতিক দানাদার খাবার খাওয়াই কালোকে। গত বছর ৬ লাখ ৫০ হাজার দাম বলেছিল। এবার এখনো কেউ দেখতেও আসেনি। ১২ লাখ টাকায় বিক্রির আশা ছিল। টাকা পেলে নতুন গরু কিনব, জমিও কিনব।
তিনি আরও বলেন, এবার বড় গরু কেনার লোক নেই। দামও নেই। তাই কেউ যদি ৭ লাখ টাকাও দেয়, খরচের টাকা উঠলেই বিক্রি করে দিব।
গরুটির বিক্রির কথা উঠতেই কান্না চেপে রাখতে পারেননি মিরানা খাতুন। তিনি বলেন, সন্তানের মতো করে বড় করেছি। সারাক্ষণ তাকে ঘিরেই আমাদের জীবন। বিক্রির কথা শুনলেই চোখে পানি আসে।
গরুর মালিকের ছেলে সরুজ আলী শেখ বলেন, এত বড় গরু ঢাকায় নেওয়া খুব কঠিন। রাস্তায় ডাকাতি, ছিনতাই, দুর্ঘটনার ভয় আছে। তাই বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে চাই। এখন আর লাভের কথা ভাবছি না। কেউ যদি খরচের দামও বলে, ছেড়ে দেব। ভবিষ্যতে আর বড় গরু পালন করব না।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম