মুস্তাফা মনোয়ার
বাংলাদেশের চিত্রশিল্প, পাপেটের বিকাশ এবং টেলিভিশন নাটকে তাঁর রয়েছে চিরস্মরণীয় অবদান। দীর্ঘ জীবনের এই বিশাল বড় ক্যানভাসে আজো তিনি অণুপ্রাণিত করে যাচ্ছেন এদেশের কোটি তরুণকে। দ্বিতীয় সাফ গেমসের মিশুক এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের লালরঙের সূর্যের প্রতিরূপ স্থাপনাসহ নানা শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত এই ব্যাক্তিত্ব খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী ও অধ্যাপক মুস্তাফা মনোয়ার।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি হাইস্কুলের নবম শ্রেণীতে পড়াকালে ভাষা আন্দোলনের স্বপক্ষে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার এঁকে জেলে যান মুস্তাফা মনোয়ার। ম্যাট্রিক পাশের পর কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস আয়োজিত নিখিল ভারত চারু ও কারুকলা প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন মুস্তাফা মনোয়ার।
১৯৬০ সালে ঢাকায় ফিরে চারুকলায় প্রভাষক হিসেবে যোগ দেয়ার মধ্যদিয়ে মুস্তাফা মনোয়রের কর্মজীবন শুরু। এরপর একে একে বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন।
মুস্তাফা মনোয়ার প্রযোজিত শেক্সপিয়রের ‘ট্রেমিং অব দি শ্রু’র মুনীর চৌধুরী অনুদিত বাংলা টেলিভিশন নাটক ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ এবং রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকবরী’ ইতিহাস সৃষ্টি করে। নাটক দুটি যুক্তরাজ্যের গ্রানাডা টিভির ‘ওয়াল্ড হিস্ট্রি অব টিভি ড্রামার জন্য মনোনীত হয়। টেলিভিশনে শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগীতমূলক অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ির নেপথ্য মূল রুপকার হলেন বিখ্যাত এই মানুষটি।
বাংলাদেশে পাপেট তৈরি ও কাহিনী সংবলিত পাপেট প্রদর্শনের জন্য কিংবদন্তী হয়ে আছেন মুস্তাফা মনোয়ার। তাঁর পাপেটের কেন্দ্রীয় ও অনবদ্য চরিত্র পারুল। তাঁর আরো বিখ্যাত দুটি চরিত্র ‘বাঘা’ ও ‘মেনি’ নিয়ে তৈরি টেলিভিশনের 'আজব দেশে' অনুষ্ঠানে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিরোধী পাকিস্তানি মনোভাবকে ব্যঙ্গ করা হতো।
২০০৪ সালে একুশে পদক প্রাপ্ত মুস্তাফা মনোয়ার ১৯৩৫ সালের পহলা সেপ্টেম্বর যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার শ্রীপুরের নাকোল গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। আজ জন্মদিনে দেশবরেণ্য এই চিত্রশিল্পীকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।
রেডিওটুডে নিউজ/ইকে