
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাইবোনছড়া পাকোজ্জ্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা পারুল চাকমা। বৃহস্পতিবার জেলা সদরের একটি হাটে তার কলিজার টুকরা ছয় বছরের ছেলেকে বিক্রি করতে আনেন। সন্তান বিক্রির জন্য দামও হাঁকেন মাত্র ১২ বাজার টাকায়।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।স্থানীয়দের নজরে এলে তাদের জেলা সদরে ২নং কলমছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুনীল চাকমার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপে বাড়ি ফেরেন মা ও সন্তান।
পারুল চাকমা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া পাকোজ্জ্যাছড়ি গ্রামের কালাবো চাকমার মেয়ে। স্বামী ছেড়ে গেছেন অনেক দিন আগে। নিজেও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। থাকেন বাবার বাড়িতে। সেখানেও অভাব নিত্যসঙ্গী। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর থেকে তিনি ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন। এ অবস্থায় সন্তানকে মানুষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বাজারে সন্তান বিক্রি করতে যাওয়া পারুল চাকমা বলেন, নিজেই ঠিকমতো খেতে পারি না। বাচ্চাকে কী খাওয়াব? এলাকার সব মানুষই কমবেশি দরিদ্র। তাই সন্তানকে একটি ভালো পরিবারে দিতে বাজারে নিয়েছিলাম। যদি কিছু টাকা পাই, সন্তানও ভালো থাকবে।
শুক্রবার ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজন চাকমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘১২ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি’ ছড়িয়ে পড়া খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, খবরটি শোনার পর আমি খুব ভোরে পারুল চাকমার বাড়িতে যাই। পারুল চাকমার পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। কয়েক বছর আগে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয় তার। এরপর থেকে বাবার বাড়িতে বসবাস করেন। কোনোরকমে মাথা গোঁজার মতো একটা ঠাঁই আছে। সে মানসিকভাবেও কিছুটা অসুস্থ। মৃগী রোগেও আক্রান্ত। দারিদ্র্যতার কারণে তাদের ঠিকমতো খাবার জুটে না। একরকম বাধ্য হয়েই সন্তানকে বাজারে বিক্রি করতে যান। বিষয়টি খুব দুঃখজনক। আমি তাদের নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি।
শুক্রবার সকালে পারুল চাকমাকে দেখতে ভাইবোনছড়ায় যান পার্বত্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের আগামী ছয় মাসের খাবার সামগ্রী ও নগদ অর্থ দিয়ে আসেন তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখার পর বিষয়টি জানতে পারি। অভাবের কারণে সন্তান বিক্রি করতে চাওয়া খুবই দুঃখজনক।
রেডিওটুডে নিউজ/ইআ