আজ মধ্যরাত থেকে দেশের জেলেরা আবারও নৌকা ও জাল নিয়ে মেঘনা, পদ্মাসহ বিভিন্ন নদীতে মাছ শিকারে নামবেন। মা ইলিশ সংরক্ষণে প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল, যা আজ শেষ হয়েছে। চাঁদপুরসহ দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। ফলে প্রায় ৫০ হাজার জেলে এই সময়ে কর্মহীন ছিলেন।
নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সরকারি তালিকাভুক্ত ৪৪ হাজার জেলের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এই চাল যথেষ্ট না হওয়ায় অন্যান্য খাদ্য, পরিবারের খরচ ও নৌকা মেরামত খরচ ধারদেনা করেই মেটাতে হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জেলেরা।
শনিবার (২ নভেম্বর) চাঁদপুর সদরের মেঘনার পাড়ে দেখা যায়, জেলেরা নতুন করে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রনাগোয়াল এলাকার জেলে নজরুল ইসলাম জানান, সরকারি সহায়তা হিসেবে কিছু চাল পেলেও পরিবারের অন্যান্য খরচ ধার করতে হয়েছে।
বহরিয়ার জেলে দেলোয়ার গাজী জানান, নৌকা ও জাল মেরামতের খরচ জোগাতে সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার করেছেন, যা মাছ ধরার মাধ্যমে আগামী এক মাসের মধ্যে সুদাসলে পরিশোধ করতে হবে।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কঠোর অবস্থানে ছিল নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড। চাঁদপুরে কোস্ট গার্ড কমান্ডার লে. ফজলুল হক জানান, পদ্মা ও মেঘনায় কড়াকড়ি টহল দিয়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে, যার অংশ হিসেবে ৬০০ জেলেকে আটক করা হয়।
ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আনিছুর রহমান জানান, অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের ভরা পূর্ণিমা ও শেষের অমাবস্যায় রেকর্ড সংখ্যক মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। সাগরের নোনা পানি ছেড়ে ইলিশেরা নদীর মিঠা পানিতে ছুটে এসেছে। তবে তাদের পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে কি না তা জাটকার পরবর্তী বিচরণে বোঝা যাবে, যা নিয়ে গবেষণা চলছে।
অপরদিকে, ভোলার চরফ্যাশনের বিভিন্ন নদী এলাকার জেলেরা জানান, এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণের অভিযান আরও কঠোরভাবে পরিচালনা করা হয়। চরফ্যাশনের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর জেলেরা এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে পুনরায় মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১২ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার।