নরসিংদীতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে পাঁচজন নিহত ও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী ও ঘোড়াশালের মধ্যবর্তী এলাকায় এ ভূকম্পনের উৎপত্তি হয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
নিহতরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন (৩৭), তার ছেলে ওমর ফারুক (৮), কাজম আলী ভূইয়া (৭০), নাসির উদ্দিন (৫০ ও ফুরকান মিয়া (৪২)। তাদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার উত্তরপাড়া গ্রামে। তারা নরসিংদীর গাবতলী এলাকায় ভাড়া থাকেন। এছাড়া কাজম আলী পলাশ উপজেলায় ও ফুরকান মিয়া শিবপুর উপজেলার বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালের ভূমিকম্পে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি তৈরি হয়। এতে ঘর-বাড়ি কেঁপে ওঠে। এ সময় লোকজনকে ঘর থেকে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। প্রায় ২৬ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে নরসিংদীর সদর উপজেলার গাবতলী এলাকার একটি নির্মাণাধীন সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে দেলোয়ার হোসেন (৩৭), তার ছেলে ওমর ফারুক (৮) ও অজ্ঞাত আরেকজন আহত হন। গুরুতর আহত ওমর ফারুক ও দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়।
অপরদিকে পলাশ উপজেলার মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়ে মালিতা গ্রামের কাজম আলী ভূইয়া (৭০) মারা যান। পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা গ্রামের নাসির উদ্দিন (৫০) ও শিবপুর উপজেলার আজকিতলা গ্রামের ফুরকান মিয়া (৪২) ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন। তাকে প্রথমে নরসিংদীর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হলে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়।
শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ফারজানা ইয়াছমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নরসিংদীর সদর হাসপাতাল ও নরসিংদী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালেল জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, কমপক্ষে দেড়শতাধিক মানুষ আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ৫৭ জন এবং নরসিংদী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্পে জেলার প্রায় সব উপজেলায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গুরুতর আহতরা হলেন- তাসপিয়া (১৮), শামীম (২০), রাকিব (২৪), আতিকুর (৭), ওমর (১০), সাইফুল (৩৬), মেহেরউন (২০), আবির (৬), নাসরিন (৩৭), ইয়ামিন (২২), মিথিলা (২০), তামিম (৬), হনুফা (৪০), বিল্লাল (৫০), জাকির (৩৫), মান্নান (১৬), ইমানুল (১৯), হিরা (৫), মাধবী (৫০), রাব্বী (২০), সাইদুর রহমান (১০), হালিমা (৪৫), দেলোয়ার (৪৫), বিন্দু (২৮), শামীম (৩৫), সূরভী (২০), জিহাদ (১৬), সাথী (২২), সোহেল (২২), মিনা (২৮), শাহাদাত (৩৫), রফিক (৩ মাস), সুমাইয়া (২০) প্রমুখ।
জেলা প্রসাশন বলছে, নরসিংদী শহরের অনেক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার নতুন বাজার গ্রামের ইশাক মিয়ার বাড়ি ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ভূমিকম্পে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাব-স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাতীয় গ্রিডের সাবস্টেশনে যন্ত্রাংশ আগুনে পুড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

