করোনা সংক্রমণ খুব দ্রুত বাড়ছে খুলনা বিভাগে। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনারোগী। শুক্রবার বিভাগের ১০ জেলায় ১ হাজার ৬৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৪১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ। একই সময়ে বিভাগে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ২৯ শতাংশ। বুধবার শনাক্ত হয় ২৮৫ জনের। শনাক্তের হার ছিল ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। শুক্রবার খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মনজুরুল মুরশিদ এ তথ্য জানান।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, বিভাগে প্রতিদিনই করোনারোগী বাড়ছে। শুক্রবার করোনা শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ২৯ শতাংশ। বুধবার শনাক্তের হার ছিল ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর আগেরদিন মঙ্গলবার বিভাগে করোনায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ সময়ে করোনা শনাক্ত হয় ১৫৮ জনের। শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ৭৩।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শনাক্তের হার আর কখনো পাঁচের ওপর ওঠেনি। আর সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে শনাক্তের হার ও সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শনাক্ত ১০ শতাংশের নিচেই ছিল। এরপর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত শনাক্ত ১৫ শতাংশের কিছু ওপরে ছিল। বৃহস্পতিবার সেইহার ২৯ ছাড়িয়ে গেছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. মুনজুরুল মুরশিদ প্রস্তুতির ব্যাপারে বলেন, আমরা খুলনা বিভাগের সব ডেডিকেটেড হাসপাতাল এবং জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছি। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার এ উদ্বেগজনক সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে অনীহা রয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, যানবাহন, হাটবাজার সর্বত্র মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছে মানুষ। সংক্রমণ ঠেকাতে ঘর থেকে বের হলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণসহ মাস্ক ব্যবহার করতে এবং টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ওমিক্রনের শঙ্কায় ইতিমধ্যে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-নার্সসহ সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ, ভেন্টিলেটর ব্যবস্থাসহ সব ঠিকঠাক রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেন, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে খুলনার সরকারি শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ছিল না করোনা ইউনিটসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। যে কারণে পরবর্তী সময়ে খুলনার তিনটি হাসপাতালে করোনা ইউনিটসহ ৩২৫টি শয্যা করা হয়।
তবে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় জেনারেল হাসপাতাল এবং আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন কেবল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২শ’ শয্যার করোনা ইউনিটের ১৩০ শয্যার কার্যক্রম চালু রয়েছে। চাপ বেড়ে গেলে অবশিষ্ট শয্যাগুলোও চালু করা হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার করোনা হাসপাতাল ঘুরে ও সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০ শয্যার এ হাসপাতালে বর্তমানে ১০৮টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনারোগীদের চিকিৎসার জন্য গত বছর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ভবনে পৃথক এ হাসপাতালটি চালু করা হয়। তখন থেকে এ হাসপাতালের সবচেয়ে বড় সংকট আইসিইউ শয্যা ও অক্সিজেনের।
অবশ্য গত বছর ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার দুটি লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক স্থাপন করায় অক্সিজেনের সংকট কিছুটা কমেছে। তবে বাড়েনি আইসিইউ শয্যা। সংকট রয়েছে চিকিৎসক ও নার্সের।
হাসপাতালটির আইসিইউ, রেড জোন (করোনা আক্রান্ত) ও ইয়োলো জোন (উপসর্গ নিয়ে ভর্তি) তিনটি ওয়ার্ডে ভাগ করা। এ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয় মাসের ১৫ দিন কর্মরত এবং বাকি ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইনের ছুটিতে থাকায় দ্বিগুণ জনবলের প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন তিন শিফটে প্রয়োজন ২০ থেকে ২২ জন চিকিৎসক। অর্থাৎ ১৫ দিনের ছুটিসহ মোট চিকিৎসক প্রয়োজন ৪৫ জন। কিন্তু চিকিৎসক রয়েছেন ২৮ জন। এরমধ্যে দু'জন রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। এছাড়া নার্স প্রয়োজন কমপক্ষে ১০০ জন। রয়েছেন মাত্র ৩০ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করছেন ১৫ জন।
করোনা হাসপাতালের ফোকালপারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ, ১৬টি এইচডিইউসহ ১০৮টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক-নার্স ও সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধাদের জন্য পৃথক ১০টি কেবিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বাকিগুলো স্বল্প সময়ের নোটিশেই প্রস্তুত করা যাবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, করোনা হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স পদায়নের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, রোগী বাড়লে চিকিৎসক ও নার্সের সংকট কেটে যাবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সারা দেশের মতো খুলনায়ও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণসহ মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
রেডিওটুডে নিউজ/ইকে