
বাজেট পাশ হয়ে গেলো। এবার বাজেট আকারে কমানো হলেও একে আবারো উচ্চাভিলাষী এবং গতানুগতিক বললো সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি। গবেষণা সংস্থা আরো বলেছে এই বাজেট জুলাই বিপ্লব পরিপন্থি। বাজেট নিয়ে এক আলোচনায় অন্য বক্তারা বললেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর ৫৪ বছর পর বাজেটে যে পরিবর্তনের সুযোগ এসেছিলো সেটাও এবার হাতছাড়া করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রোববার সকালে উপদেষ্টা পরিষদ যখন চূড়ান্ত আলোচনা করে বাজেট পাশ করছে তখনই এই বাজেট নিয়ে আলোচনায় বসেছিলো বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সভায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন ফাহমিদা খাতুন এবারের বাজেটের আকার ও লক্ষ্যমাত্রাও উচ্চাভিলাষী। এর বাস্তবায়ন নিয়ে ছয় মাস পর এটি গভীর পর্যালোচনা প্রয়োজন।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না। কেন সেটা পারে না, কারণ সেখানে কোন কাঠামোগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হয়নি। সংস্কার ছাড়া এ ধরনের কাঠামো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রেখে এ ধরনের ঘাটতি চলতেই থাকবে।
তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি সূচকগুলোর যেসব প্রক্ষেপণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনে হয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক নিম্নমুখী। এর মধ্যে রপ্তানি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, এইগুলো ভালোর দিকে আছে। টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে একেবারে স্থবিরতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রক্ষেপণ প্রসঙ্গে ফাহমিদা বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২৫-২৬ এর জন্য সাড়ে ৫ শতাংশ বলা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে রিভাইজড বাজেটে এটা ছিল পাঁচ শতাংশ। বিবিএস বলেছে চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি। চার শতাংশ থেকে সাড়ে পাঁচ শতাংশ করতে গেলে বেশ কিছুটা উল্লম্ফন দরকার। এই প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার বিনিয়োগ।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার বাজেটে ঘোষণার পর যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি, এর কারণে জনগণ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মতামত নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি।
তিনি বলেন, আমাদের রাজস্ব আয়ের দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছে পরোক্ষ কর। এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর। কিন্তু বাজেটের দর্শন হচ্ছে পুনর্বণ্টন। যাদের আয় বেশি তাদের থেকে বেশি কর আদায় করা। যারা অবহেলিত বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের ওই করের টাকা ব্যয় করা। অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা। পুনর্বণ্টনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বাজেটে সে বড় ধরনের পরিবর্তন দিতে পারেনি। অথচ জুলাই-আগস্টের পর আমাদের বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল। এবারে ব্যতিক্রমী বাজেট হবে, আমরা দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
আলোচনা সভায় ব্যবসায়ী নেতারা, বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো এবারের বাজেটেও কালো টাকার মালিক এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে যদিও শিল্প এবং কর্মসংস্থান নিয়ে ভালো কোনো দিক নির্দেশনা নেই। আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজনীতিবিদরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত বাজেটে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি। প্রবাসীদের জন্য নেই কোনো সুখবর।
যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া শুল্ক সুবিধা অন্য দেশও দাবি করতে পারে উল্লেখ করে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর প্রভাব কতটা পড়বে তা ভেবে দেখতে হবে। আলোচনা সভায় বিএনপিনেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন নিশ্চয়তাহীন এবং অরাজনৈতিক সরকার কখনো জন আকাঙ্ক্ষা পূরণের বাজেট দিতে পারে না। তিনি বলেন আসলে জুলাই বিপ্লবের পর দেশের মানুষকে নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টাও নেই এই সরকারের।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম