ফাইল ছবি
মাত্র এগারো বছর বেঁচে থাকা বিখ্যাত অথচ ছোট্ট এক রাজপুত্তুর; কিন্তু তাঁকে নিয়ে রচিত হয় হাজারো পৃষ্ঠার স্মরণীয় আখ্যান। চঞ্চল প্রকৃতির আদুরে-মায়াবী প্রকৃতির বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ এই পুত্র হইচই করে সারাবাড়ি সবসময় মাথায় তুলে রাখতেন। বাঙ্গালীর হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতির সেরা এক নাম- শহীদ শেখ রাসেল।
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে মা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের কোলজুড়ে গোলাপ হয়ে ফোটেন, শেখ রাসেল। ছোটভাই ভূমিষ্ট হবার পর প্রথম তাঁকে কোলে নেন, রাসেলের বড় বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শৈশবে বাড়ির ভেতরে সাইকেল চালিয়ে সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটতো, ছোট্ট রাসেলের।
দার্শনিক বার্ন্ট্রান্ড রাসেলের সঙ্গে মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজের আদুরে পুত্রের নাম রাখেন। বালক রাসেলের চরিত্রে আভিজাত্যের ছোঁয়া ছিল, ছিল গাম্ভীর্যতাও। বাড়িতে দুষ্টুমি করলেও, বাবার রাষ্ট্রীয় সফরে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতেন সর্বদাই। সচরাচর প্রিন্স কোট, সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও মুজিবকোট পরা, ফ্যাশন সচেতন ছোট্ট রাসেল যেন ছিলেন পিতার প্রতিচ্ছবি।
‘কারাগারে রোজনামচা’ বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসংখ্যবার রাসেলের কথা তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনে, বাবার বর্ণনায় অবুঝ শেখ রাসেলের সাক্ষাতের বয়ান ও পিতাকে বাসায় ফিরিয়ে নেবার আকুতির বর্ণনা পড়ে পাষাণ হৃদয়ের মানুষেরও চোখ ভিজে উঠবে। মৃত্যুর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন, দরদভরা হৃদয়ের বালক রাসেল।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে ধানমন্ডির বাসভবনে নির্মমভাবে সস্ত্রীক হত্যা করা হয় পুত্র রাসেলসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের। প্রবাসে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা।
‘আমি মায়ের কাছে যাবো’ বলে সে সময় রাসেল আর্তনাদ করলেও তাঁর পুস্পময় জীবনের অঙ্কুরেই বিনাশ ঘটায় দেশদ্রোহী হয়নার দল; রাসেল হয়ে যায় বেদনার মহাকাব্য। শহীদের মৃত্যু নাই। বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে শেখ রাসেল পরম ভালোবাসা ও প্রেরণার অনন্য একটি বাতিঘর। ফুলের শুদ্ধ সৌরভ আর লক্ষ তারার আলো হয়ে শেখ রাসেল ছড়িয়ে আছে প্রাণ থেকে প্রাণে।
রেডিওটুডে নিউজ/এমএস/জেএফ