কোনও হ্রদ নেই, নদী নেই, নেই কোনও ঝর্ণা। এককথায় খাবার পানির বিপুল অভাব। আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে জেগে আছে একটি দ্বীপ। নাম বারমুডা। খাবার পানির অভাব সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দ্বীপ এটি।
হাজার হাজার মানুষ বসবাস করেন এই দ্বীপে। বছরের পর বছর ধরে কীভাবে পানি সঞ্চয় করে জীবন নির্বাহ করে চলেছেন এই দ্বীপের মানুষ, তা সত্যিই একটি বিস্ময়। পশ্চিমা দুনিয়ায় অন্যতম পানি-সচেতন হিসাবে চিহ্নিত বারমুডার মানুষ। সেই ১৭ শতক থেকেই সেখানকার বাসিন্দাদের ঘর-বাড়িতে পানির অপচয় রোধের চিহ্ন তাই স্পষ্ট।
বারমুডায় গিয়ে থাকলে যে বিষয়টি প্রথমেই চোখে পড়বে তা হল, এর ঘর-বাড়ির স্থাপত্য। সাদা রঙের চুনাপাথরের ছাদের চতুর্দিকে থাকে ঢাল। যাতে সহজেই পানি গড়িয়ে পড়ে যেতে পারে। তারপর পাইপ দিয়ে ভূগর্ভের জলাধারে প্রবেশ করে বৃষ্টির পানি। পানি সঞ্চয়ের জন্য প্রতিটি ঘরের নিচেই ১০০ গ্যালনের জলাধার থাকা বাধ্যতামূলক। খাবার পানির সমস্যা দূর করার জন্য স্থানীয়রা এভাবেই বৃষ্টির পানি সঞ্চয় করে রাখেন। সারা বছর এই সঞ্চিত বৃষ্টির পানি দিয়েই খাবার পানির সঙ্কট দূর করেন তাঁরা।
বাড়িগুলোর এই নকশা বছরের পর বছর ধরেই অনুসরণ করে আসছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ফলে ২০০ বছরের পুরনো বাড়ির পাশেই গড়ে ওঠা নতুন বাড়িও দেখতে একই রকম। প্রতিটি বাড়ির নকশা কেমন হবে তা সে দ্বীপের আইনেও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি এই নকশায় গড়ে তোলাও বাধ্যতামূলক। আইন অনুযায়ী, বাড়ির ছাদ এমন ভাবেই নির্মাণ করতে হবে যাতে তার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভস্থ পানিাধারে সঞ্চিত হয়।
এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনেও বারমুডার প্রতিটি মানুষ পানির অপচয় রোধে সদা সতর্ক। শিশুদেরও ছোট থেকেই এ বিষয়ে সচেতন করা হয়। এত চেষ্টার পরও অনেক সময়ই পানি সঙ্কটে ভুগতে হয় তাঁদের। বিশেষ করে ২০ শতকে বারমুডার পর্যটন শিল্প ফুলেফেঁপে ওঠায় পানির সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। তা কাটাতে সমুদ্রের নোনা পানিকে পরিশ্রুত করে তা খাবার পানি হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়। তবে জীবন বাঁচাতে পানির জন্য যে লড়াই তাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁদের কাছে সরকারি পানি নেওয়ার অর্থ সেই লড়াইয়ে হার মানা। জীবনযুদ্ধে হার মানতে নারাজ এই দ্বীপের মানুষ।
রেডিওটুডে নিউজ/জেএফ