‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি কর’ স্লোগান সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস-২০২২ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সুইসাইড ক্লিনিকের উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আত্মহত্যা শব্দটি হলো ইনটেনশনালি নিজেকে মেরে ফেলা। আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হলো ইগো। এটি হলো নিজের মতামতের বাইরে অন্য মতামত অগ্রহণযোগ্য।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, আত্মহত্যার আরেক কারণ হলো ডিপ্রেসন। ইদানিং তা বেড়ে গেছে। করোনায় অনেকের ডিপ্রেসনের কারণে ব্লাড প্রেসারও বেড়ে গেছে। ডায়াবেটিস যাদের ছিল না, তাদেরও তা হয়েছে। চোখের পাওয়ার বেড়ে গেছে। অনেকে চশমা পরতেন না, ওদেরও সেটার প্রয়োজন হয়েছে।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একাকিত্ব থাকার সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে অনেকে আত্মহত্যার দিকেও ধাবিত হচ্ছেন। ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে মানুষের ইগো বেশি থাকে। এসময়ে আত্মহত্যার প্রবণতা অধিক থাকে। বাবা-মা অথবা অভিভাবকদের এ বয়সের ছেলে-মেয়েদের সময় দিতে হবে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে- এসব বিষয়ে অভিভাবকদের খোঁজখবর রাখতে হবে। এ বয়সী ছেলেমেয়েদের আবেগ বেশি থাকে। এ কারণে ছেলেমেয়েরা প্রেম-ভালোবাসার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে বিচ্ছেদের কারণে আত্মহত্যার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়।
তিনি বলেন, জেনেটিক কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করে থাকেন। পরিবারের মধ্যে কারো যদি এ ধরনের টেন্ডেসি থাকে, তাদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও রেসিডেন্ট আত্মহত্যার প্রবণতা, সম্প্রতি আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার বের করার জন্য গবেষণায় মনোযোগ দেয়ার নির্দেশনাও প্রদান করেন শারফুদ্দিন আহমেদ।
গুরুত্বপূর্ণ ওই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, এনডিডি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী, বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, এটিসিবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার।
এছাড়া সেমিনারে ‘ম্যানেজমেন্ট অব সুইসাইড সারভাইভারস’ এর ওপর প্যানেলিস্ট হিসেবে বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. এম মুহিত কামাল আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সুইসাইড ক্লিনিকের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মহসীন আলী শাহ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. সিফাত-ই-সাইদ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা জহুরা এবং অনুষ্ঠানটির সমন্বয় করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম আতিকুর রহমান।