শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৭ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

তুরস্কে দাবানল: প্রাকৃতিক নাকি নাশকতা? 

সোহেল রানা

প্রকাশিত: ২১:১৪, ৩ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ০১:০২, ৫ আগস্ট ২০২১

Google News

এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি তুরস্কে ছড়িয়ে পড়া দাবানল। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, অন্তত ১৩টি স্পটে এখনো আগুন জ্বলছে। বিশেষ করে মুগলা প্রদেশের কয়েকটি জায়গায় আগুন আরো তীব্র হয়েছে। লোকজন নিজেদের গবাদি পশু নিয়ে সৈকত ও অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। 

সপ্তাহখানেক আগে তুরস্কে সবচেয়ে বিস্তৃত দাবানলের সূচনা হয়েছিল আনতালিয়া শহরের মানাভগাট এলাকায়। এটি একটি টুরিস্ট স্পট; রাশিয়া তথা বাইরে থেকে ঘুরতে আসা মানুষদের অন্যতম পছন্দের স্থান। আনতালিয়ার আরো কয়েকটি এলাকায়ও আগুন দেখা গেছে। কেবল আনতালিয়া নয়, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে তুরস্কের বহু শহরে। যদিও বেশিরভাগ এলাকায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানানো হয়েছে। 

বনাঞ্চল থেকে শুরু  হওয়া এই আগুন লোকালয়েও হানা দিয়েছে। ফলে কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর, গবাদি পশু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ ঘর হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নেয়। তুরস্কের সরকারি তথ্য বলছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়ে ৩৫টি প্রদেশে। এসব এলাকার বনাঞ্চলে অন্তত ১২৯ জায়গায় আগুন চিহ্নিত করা হয়, তবে বেশিরভাগ আগুনই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কিন্তু পর্যটন সমৃদ্ধ মানাভগাট ও মারমারিসে এখনো জ্বলছে আগুন। মারমারিস এলাকায় একটি পরিবার রাতের বেলা দাবানল থেকে প্রাণে বাঁচতে পালানোর সময় ‘আগুন আগুন ’ বলে ক্রন্দনরত একটি শিশুর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

দাবানলে প্রতিদিনই বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। বাড়ছে ক্ষয়-ক্ষতিও। আগুন নেভাতে প্রাণপনে লড়ছেন কয়েক হাজার তুর্কি দমকল কর্মী। দেশটির ভূমধ্যসাগরীয় এবং এজিয়ান অঞ্চল, যেখানে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে আগুনের সাথে লড়াই করছেন দমকলকর্মীরা। বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে পানি ছোড়া হচ্ছে দাবানল স্পট লক্ষ্য করে। কিন্তু রেকর্ড উচ্চ তাপমাত্রা এবং জোরালো শুষ্ক বাতাস সেই প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে। মারমারিস সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মুগলা প্রদেশে অন্তত দুটি এলাকায় দাবানলের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। ইরান,আজারবাইজান, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসা আকাশযানও দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। 

দাবানল নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেতে ড্রোন কাজে লাগাচ্ছে তুরস্ক। স্থানীয়ভাবে তৈরি বায়রাকতার টিবি -টু এবং আকসুঙ্গুর ড্রোন এরইমধ্যে মোতায়েন করা হয়েছে। দাবানলের স্পট চিহ্নিতকরণ, নজরদারি ও আগুন নেভানোর কাজে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যে দুটি এলাকায় অর্থাৎ মানাভগাট ও মারমারিসে অন্তত ডজনখানেক ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে। 

বায়রাকতার টিবি-টু সশস্ত্র ড্রোন উৎপাদন করে তুর্কি প্রতিরক্ষা কোম্পানি বায়কার টেকনোলজিস। ড্রোনটির স্বপ্নদ্রষ্টা সেলজুক বায়রাকতার। তিনি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ানের জামাতা। এই ড্রোন খুবই কার্যকরী, দিনে-রাতে যেকোন সময় উড়তে সক্ষম। ২৭ হাজার ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উড়তে সক্ষম এই ড্রোন দেড়শো কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে। ২০১৫ সাল থেকে তুরস্কের সামরিক বাহিনী ড্রোনগুলো ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে নাগরনো কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানের সফলতার নেপথ্যে আছে বায়রাকতার। অন্যদিকে, আকসুঙ্গুর ৪০ হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে সক্ষম , বহন করতে পারে সাড়ে সাতশো কেজি বিস্ফোরক।

চলমান দাবানল তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শিল্পের ওপর অনেক বড় একটা আঘাত হানছে। কয়েকটি স্পট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অনেককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের সরকার সমর্থকরা মনে করেন এই দাবানলের পেছনে নাশকতা আছে। তাদের ভাষায় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বিশেষ করে পিকেকে টুরিজমের ভরা মৌসুমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতেই এধরনের কাজ করে যাচ্ছে। পিকেকে হলো কুর্দি গেরিলাদের একটি সংগঠন যারা তুরস্ক থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির আশায় লড়ছে। তবে তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করে আসছে তুর্কি সেনাবাহিনী। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ান গত শনিবার ৩০টি গাড়ির বহর নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকা ঘুরে দেখেছেন। তিনি নিজেও বিষয়টিতে নাশকতার যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অপরাধীদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে এরদোয়ান বলেছেন, “যদি কেউ আমাদের হৃৎপিণ্ড উপড়ে নেয়, আমি শপথ করে বলছি, আমরাও তার হৃৎপিণ্ড উপড়ে ফেলব। নাশকতার সেরকম কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এই সন্দেহ কি একেবারেই অমূলক? নাশকতার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রাও যোগ দিয়েছেন আগুন নেভাতে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে টহল দিচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। মানাভগাট সহ কিছু এলাকায় আগুন লাগার ঘটনায় পিকেকে সদস্যদের সন্দেহে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। স্থানীয়রা অগ্নিকান্ডের স্থলে অপরিচিত লোকজন দেখতে পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানাচ্ছেন। কয়েকজনকে ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তুলেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের সাথে পিকেকের সম্পৃক্ততা আছে কিনা নিশ্চিত নয়। তুরস্কে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলেই পিকেকে গেরিলাদের সন্দেহ করা হয়। তবে এ ধরণের সব ঘটনায় তাদের যোগসূত্রতা প্রমাণিত নয়। চলমান দাবানলে তাদের যোগসূত্রতার হদিস পেতে  হয়তো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের