বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

বন্ধুর পথ পেরিয়ে বিদায়ের পথে মেরকেল

সোহেল রানা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

Google News
বন্ধুর পথ পেরিয়ে বিদায়ের পথে মেরকেল

অ্যাঙ্গেলা মেরকেল (ফাইল ছবি)

সরকারপ্রধান হিসেবে জার্মানিকে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি হলেন হেলমুট জোসেফ কোল। হেলমুট ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন। দিন হিসেব করলে তিনি জার্মান সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৭৯ দিন। হেলমুটের পর জার্মানিকে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি হলেন তার শিষ্য অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।

জার্মানির সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হননি মেরকেল। অবশ্য আগেই এই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ফলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশটিতে যে নির্বাচন হলো, তাতে মেরকেল পরবর্তী নতুন চ্যান্সেলর বেছে নিতে ভোট দিয়েছেন জার্মানরা। শাসক হিসেবে কেমন ছিলেন মেরকেল? ইতিহাস তাকে কীভাবে মনে রাখবে?
 
মেরকেলকে যারা পছন্দ করেন, তারা তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। জার্মানদের এই অংশটা মনে করেন, মধ্য ডানপন্থি দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের নেতা হলেও মেরকেলের আমলেই জার্মানি রক্ষণশীলতার বৃত্ত ভেঙে কিছুটা উদার পথে হাঁটতে পেরেছে। একাধিক সংকটময় মুহুর্তে ইউরোপকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেরকেল। বিশেষ করে শরনার্থী সংকট মোকাবেলা করেছেন অনেকটা সাহস নিয়েই। ইউরো সংকটের সময় গ্রিসকে ঋণ পরিশোধে সময় বাড়িয়ে দেওয়া, দক্ষ হাতে ২০০৮ এর মন্দা সামলানো এবং ২০১৫ সালে সিরীয় শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খোলা রাখা- সবই মেরকেলকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

যদিও মেরকেলেরও যথেষ্ট সমালোচনা আছে। সমালোচকরা বলছেন, সুযোগ থাকার পরও মেরকেল অনেক কিছু করেননি; অথচ চাইলেই তিনি করতে পারতেন। সমাজ সংস্কারের বদলে নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখাতেই ছিল তার বিশেষ নজর।

মেরকেল বড় হয়েছেন সাবেক পূর্ব জার্মানিতে। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়ান। যুক্ত হন পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টির যুব সংগঠনের সঙ্গে। দুই জার্মানি এক হবার পর বেশ কয়েকটি দল ঘুরে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নে থিতু হন মেরকেল। এই দল থেকেই চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন তিনি। জার্মানিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৬ বছর।

তবে মেরকেলের উত্থান অতটা সহজ ছিল না। নিজের দলের মধ্যেই অনেক বাধা ডিঙাতে হয়েছে তাকে। মেরকেলের জীবনীকার জ্যাকুলিন বয়সেন বলছেন, শুরুর দিকে দলে তেমন গুরুত্ব পেতেন না মেরকেল। তবে তিনি হতাশ হন নি, কথার চেয়েও বেশি মনোযোগী ছিলেন কাজে। অন্যদের তুলনায় কিছুটা বাস্তববাদী ছিলেন বলে মেরকেলের মূল্যায়ন সেভাবে হয়নি বলেই মনে করেন জীবনীকার বয়সেন। কিন্তু এই অবহেলাই মেরকেলকে ওপরে টেনে এনেছে। জার্মানি ছাড়িয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে মেরকেল হয়ে ওঠেন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণযোগ্য।

টানা ১০ বছর টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীর আসনে ছিলেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। নিজের দল, সরকারে, এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন পদে নারীদের বসিয়েছেন যখন যেভাবে সুযোগ হয়েছে। তাঁর আমলে জার্মান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে তুলনামূলক বেশি নারী দেখা গেছে। বিদেশে বিভিন্ন সফরেও নারী অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতেন মেরকেল।

বিশ্বনেতাদের বেশিরভাগ সম্মেলনে অনেক সময় একাই নারীদের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়েছে মেরকেলকে। এমনকি সহ্য করতে হয়েছে উপেক্ষা আর অনাকাঙ্খিত সব আচরণ। এমনই একটি ঘটনা আছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। মেরকেল কুকুর ভয় পান এমনটা আগে থেকেই জানতেন পুতিন। তারপরও মেরকেল এর সাথে এক বৈঠকে নিজের বিশালদেহী কুকুর নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি।

রেডিওটুডে নিউজ/জেএফ

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের