
লালমনিরহাটের দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। দেশটির আশঙ্কা, বিমানবন্দরটির পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়ায় চীনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর ফলে ভারতের নিরাপত্তাজনিত হুমকি সৃষ্টি করতে পারে বলে দাবি করছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লালমনিরহাট বিমানবন্দর ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে এবং কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ‘সিলিগুড়ি করিডর’ বা ‘চিকেন নেক’-এর খুব কাছাকাছি অবস্থিত। যদিও বাস্তব মানচিত্রে লালমনিরহাট থেকে শিলিগুড়ি করিডরের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার, তথাপি প্রতিবেশী দেশের এই উদ্যোগকে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছে নয়াদিল্লি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত মনে করছে, চীন যদি এই বিমানবন্দর পুনর্গঠনে সহায়তা করে, তাহলে তা ভবিষ্যতে ফাইটার জেট, রাডার ও নজরদারি সরঞ্জাম স্থাপনের মতো সামরিক ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। সেই প্রেক্ষাপটে ভারতও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কৌশলগত প্রস্তুতি নিচ্ছে। ত্রিপুরার কাইলাশহর বিমানবন্দর, যা ১৯৯০-এর দশকে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তা পুনরায় চালুর কাজ শুরু করেছে ভারত। মূলত বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলেও, প্রয়োজনে এটি সামরিক বিমান চলাচলের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের দিকেও নজর রাখছে ভারত। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং নতুন সরকার চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। যা ভারতের দৃষ্টিতে উদ্বেগজনক।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর পুনঃচালুর বিষয়টিকে স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সোমবার (২৬ মে) বিকেলে সেনাসদরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্স অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা জানান, দেশের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরের পরিধি ও কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে এবং সেখানে আধুনিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ওই এলাকায় একটি এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে এবং বিমানবন্দরটিকে এভিয়েশন খাতের সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে কাজে লাগানো হবে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে, লালমনিরহাট বিমানবন্দর একটি জাতীয় সম্পদ, এবং জাতীয় স্বার্থেই এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এই প্রেক্ষাপটে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণে লালমনিরহাট বিমানবন্দর আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে—যেখানে আঞ্চলিক শক্তির প্রতিযোগিতা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ একে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম