
গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে আসা ফিলিস্তিনপন্থী ব্রিটিশ সংগঠন 'প্যালেস্টাইন অ্যাকশন'কে সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। এর মধ্য দিয়ে সরকার ব্রিটেনের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের 'বিরক্তিকর অপব্যবহার' করেছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) তুর্ক গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং মতপ্রকাশ ও প্রতিবাদের স্বাধীনতা সীমিতকারী আইনটি সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য সরকারের অভিযোগ, গত জুন মাসে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সদস্যরা একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশ করে এবং দুটি বিমানে স্প্রে পেইন্ট করে।
এরপর দেশটির 'সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০'-এর অধীনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইনটি 'সম্পত্তির গুরুতর ক্ষতিকে' সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করার অনুমতি দেয়।
ভলকার টার্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী আইন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং সম্পত্তির গুরুতর ক্ষতিকে এতে অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কেবল মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত বা জিম্মি করার উদ্দেশ্যে করা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। এটি সন্ত্রাসবাদের গুরুত্ব এবং প্রভাবকে অপব্যবহার করে স্পষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে প্রসারিত করছে।'
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সদস্য হওয়া, এর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা অথবা এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রকাশকারী পোশাক পরাও একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে - যার শাস্তি ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
তুর্ক বলেন, 'সিদ্ধান্তটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে। এটি অনেক মানুষের অধিকার সীমিত করে...যারা নিজেরা কোনো অন্তর্নিহিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন বরং তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার প্রয়োগ করেছেন।'
মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ৫ জুলাই থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে কমপক্ষে ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। জানা গেছে, তাদের অনেকেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তুর্ক যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সংশ্লিষ্ট তদন্ত বন্ধ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে দেন, 'এই সিদ্ধান্তটি সুরক্ষিত মত প্রকাশ এবং অন্যান্য আচরণকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে মিশিয়ে দেয় এবং এটি অনেক মানুষের অধিকারের বৈধ প্রয়োগের ওপর আরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।'
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম