
পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার জেরে ভারতের ওপর রুষ্ট হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই প্রেক্ষিতে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক হঠাৎ দ্বিগুণ করে দিয়েছেন তিনি। ২৫ শতাংশ থেকে তা বাড়িয়ে এক লাফে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। এর ফলে রাতারাতি ভারতের শেয়ারবাজারে বড়সড় ধস নামে।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে বাজার খোলার পরপরই সেনসেক্স সূচক ৩৩৫.৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৮০,২০৮.২৮-এ, এবং নিফটি সূচক ১১৪.১৫ পয়েন্ট কমে পৌঁছায় ২৪,৪৬০.০৫-এ। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে রপ্তানি-নির্ভর খাতগুলোতে।
নতুন শুল্ক নীতির ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপিত বাণিজ্য অংশীদারদের তালিকায় উঠে এসেছে ভারত। বিশ্লেষকদের মতে, এমন উচ্চ হারের শুল্ক দীর্ঘমেয়াদে ভারতের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে।
এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ-এর সিইও ধীরাজ রেল্লি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের শুল্ক ভারতের অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিতে পারে।
যদিও রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI) এখন পর্যন্ত ২০২৫ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রেখেছে, তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ৩০ থেকে ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (FIEO) এর সভাপতি এস.সি. রালহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আমাদের রপ্তানির প্রায় ৫৫ শতাংশকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানিকারকেরা প্রতিযোগিতায় ৩০–৩৫ শতাংশ পিছিয়ে পড়ছে।
২০২৪ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৭.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে স্মার্টফোন, ওষুধ, রত্নপাথর, টেক্সটাইল এবং শিল্প যন্ত্রপাতি।
এই খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গয়না এবং সামুদ্রিক খাদ্য খাত, যা প্রধানত শ্রমনির্ভর। ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারক সংস্থা জানিয়েছে, উচ্চ শুল্কের ফলে তাদের ৩ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হুমকির মুখে।
এ দিকে ‘আমাকে মূল্য দিতে হতে পারে, তবুও কৃষকদের সঙ্গে আপস নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবির পরও ভারত তার কৃষিখাতকে পুরোপুরি উন্মুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার এক ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত কখনই তার কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে আপস করবে না। আমাকে হয়তো ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হবে, কিন্তু আমি তার জন্য প্রস্তুত।
ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকস এর বিশ্লেষক শীলান শাহ এক নোটে উল্লেখ করেন, ভারতের জিডিপির প্রায় ২.৫ শতাংশ আসে মার্কিন বাজার থেকে। অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে, ভারতের রপ্তানি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি — উভয়ই ব্যাহত হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এর ফলে ভারতকে একটি উদীয়মান উৎপাদন হাব হিসেবে দেখা ভয়াবহভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের হঠাৎ এই শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত ভারতের রপ্তানি খাত, শেয়ারবাজার এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে তাৎক্ষণিক ও সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা এখন স্পষ্ট। ভারত সরকার ও ব্যবসায়ীদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—এই সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম