পদ্মা সেতু বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলোর একটি। বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে একসময় এই সেতুটি নির্মিত হবার কথা থাকলেও,‘নির্মাণ কাজের দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে ২০১১ সালে এই প্রকল্পে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সংস্থাগুলো।
বিশ্বব্যাংক অর্থ প্রদানে অপারগতা প্রকাশের পর দেশে বিদেশে এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা ও বিতর্কের এক পর্যায়ে ২০১২ সালের ৯ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, কোনও রকম বিদেশী সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজ খরচে এই মেগা-সেতুটি নির্মাণ করার।
অবশ্য বিশ্বব্যাংক আরোপিত দুর্নীতির অভিযোগের কলঙ্ক বেশিদিন বইতে হয়নি বাংলাদেশকে। তদন্তে এর সত্যতা খুজে পায়নি সংস্থাগুলো। কানাডার টরেন্টোর একটি আদালতে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের দুর্নীতির এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
এরপরে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বরে নদীশাসনের কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান। আর শেষ স্প্যান বসে ১০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে। এতে দৃশ্যমান হয় পুরো পদ্মা সেতু।
পুরো সেতু দৃশ্যমান হতে বছরের হিসাবে সময় লেগেছিল ৩ বছর ২ মাস ১০ দিন। প্রথমদিকে স্প্যান স্থাপনের গতি কম থাকলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বরে বসে ৪১তম স্প্যানটি। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য দৃশ্যমান হয়।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষের সাথে দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষের যোগাযোগ সহজ করবে এবং অর্থনীতিতেও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব তৈরি হবে বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এই সেতু দক্ষিণ বঙ্গের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুতে গাড়ির লেন থাকবে একেক পাশে দুটো করে এবং একটি ব্রেকডাউন লেন। অর্থাৎ মোট ছয় লেনের ব্রিজ হচ্ছে, যদিও একে বলা হচ্ছে ফোর লেনের ব্রিজ।
দ্বিতল পদ্মা সেতুর এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়, আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই সেতুটি উদ্বোধনের পর আগামীকাল রোববার সকাল থেকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেতুর ওপরে গাড়ি চলাচল করবে আর রেল চলবে নিচের অংশে। যদিও রেল চালু হতে আরও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেডিওটুডে নিউজ/ইআ
ইমদাদুল আজাদ