শনিবার,

১৮ মে ২০২৪,

৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শনিবার,

১৮ মে ২০২৪,

৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Radio Today News

ছাত্রলীগের সম্মেলন ৩ ডিসেম্বর

ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রকাশিত: ০০:৫০, ৮ নভেম্বর ২০২২

Google News
ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩ ডিসেম্বর। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে শতাধিক পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী। এদের মধ্যে অনেকের ছাত্রত্ব শেষ আবার কারও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স শেষ। যদিও বিভিন্ন সম্মেলনে গঠনতন্ত্রের বাইরে দুই এক বছর বাড়ানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হওয়া দুই নেতৃত্বের বয়স প্রায় ৩০ বছর হওয়ায় তারা শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের সঙ্গে খুব একটা জড়িত থাকতে পারেনি। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই ছাত্রত্ব আছে এমন পদপ্রার্থীদেরকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাথমিক সদস্য হতে হলে তার ছাত্রত্ব থাকতে হবে। এবং বয়স অনুর্ধ্ব ২৭ বছর হতে হবে। এই শর্তে যে কেউ ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে কারো ছাত্রজীবন ব্যত্যয় দেখা দিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ তার সদস্যপদ বাতিল বা মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখতে পারে। যদিও গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট এই নিয়ম মানেন না সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রে থাকা নিয়মানুযায়ী দুই বছর পরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম রয়েছে। যদিও অধিকাংশ সময়ই এই নিয়মেরও ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে কোন কমিটি আড়াই বছর আবার কোন কমিটি তিন বছরের বেশি সময় অতিবাহিত করেছে। নিয়মের এই ব্যত্যয়ের ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সের ব্যাপারেও ছাড় দিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোন কমিটির সময় এক বছর আবার কোন কমিটির সময় দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরফলে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে পরিচালনায় নিয়মিত হতে পারেননা সংগঠনটির নেতারা।

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত তিন সম্মেলনে ছাত্রলীগের বয়স গঠনতন্ত্রের বাইরে দুই এক বছর করে বাড়ানো হয়েছে। ২০১১ সালে সংগঠনটির ২৭তম সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন সভাপতি হিসেবে বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০১১ সালে সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারন সম্পাদক ছিলেন মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। সে সময় বিএনপি এবং তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই হিসেবে ২০১১ সালের সম্মেলনে বয়স ধরা হয় ২৯ বছর। এরপর ২৮তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসেন। সেই সম্মেলনে বয়স করা হয় ২৯ বছর। এরপর সর্বশেষ সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানী। তাদের সম্মেলনের বয়স গঠনতন্ত্রের বাইরে বাড়িয়ে করা হয় ২৮ বছর। যদিও পরবর্তীতে সেটি আরও এক বছর বাড়িয়ে ২৯ বছর করা হয়। অর্থাৎ ২৮ বছর ৩শত ৬৪ দিন।

এদিকে, ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের বড় অংশের বয়স গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ। যদিও পুরোনো প্রচলন অনুযায়ী দুই এক বছর বাড়বে- এই আশায় অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা যায়। তাদের একটি অংশ বয়সের বিষয়টি নিয়ে ভিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। নিয়মানুযায়ী, ২৯ বছর অর্থাৎ ২৮ বছর ৩শত ৬৪দিন এবং ২৮ বছর অর্থাৎ ২৭ বছর ৩শত ৬৪দিন। অথচ এই বিষয়টিকে তারা আরও এক বছর বাড়িয়ে ২৯ বছর মানে- ২৯ বছর ৩শত ৬৪ দিন এবং ২৮ বছর মানে- ২৮ বছর ৩শত ৬৪দিন বলে অপপ্রচার করছেন। সেই হিসেব অনুযায়ী বয়স হয় ৩০। যা ছাত্রলীগের কখনোই হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩০তম সম্মেলনের এক পদপ্রত্যাশী এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই বয়স নির্ধারণ করা উচিত। এর বাইরে দুই এক বছর বাড়তে পারে। কেননা, বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে থাকা দুইজনের বয়স বেশি হওয়ায় তারা বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলোর ক্ষেত্রে অছাত্রদের পদে বসিয়েছেন। এবং শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কার্যক্রম ছাড়া সারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংগঠনের নিয়মিত কার্যক্রম করতে পারেনি। বর্তমান কমিটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে এগিয়ে আসলেও প্রাতিষ্ঠানিক দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত ছাত্রদেরকে শীর্ষ পদে আনলে বঙ্গবন্ধু এবং ছাত্রলীগের আদর্শ বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে ছাত্রনেতাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদের কোয়ালিটির প্রয়োজন হয়। স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতা উত্তরকালীন, স্বৈরাশাসন এবং খালেদা জিয়ার সময় দেশে অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। সে সময় সেই অনুযায়ীই নেতৃত্ব নির্বাচন করতে বয়স বিবেচনা করা হতো। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। এবং দেশে গণতান্ত্রিক পরিস্থিত বিরাজ করছে। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ীই বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান কমিটির মধ্যে করোনার সময়ে একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। সেটাও বিবেচনাধীন আবার অন্যান্য সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও ততটা চোখে পড়ে না। সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি নির্বাচন করতে কেমন বয়স নির্ধারণ করা হবে সেটি সেই অনুযায়ীই ঠিক করা হয়। তবে, যারা শীর্ষ নেতৃত্বে আসবে তারা নিয়মিতই ক্যাম্পাসে থাকা প্রয়োজন।

রেডিওটুডে নিউজ/ইআ

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের