
বৃহস্পতিবার ঢাকা আকাশে দেখা মিললো রং-বেরঙের বিমান। এনিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানান জল্পনা-কল্পনা দেখা দিয়েছে। তবে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় বিমানবাহিনীর প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিষ্ঠার ৫২ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। তাই আকাশে নানান রঙের বিমান আর লাল সবুজ ধোয়া ছেড়ে সেই উৎসব উদযাপন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে ‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’ স্লোগানের ধারক-বাহক এই বাহিনী। উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকার আকাশে উড়ছে নানান রঙের বিমান।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধার নেয়া বিমানের মাধ্যমে এই দিনে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। সে কারণে প্রতিবছর এই দিনটি ‘বিমান বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
১৯৭১ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা ডেপুটি চীফ অব স্টাফ ও সেন্টার কমান্ডারের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোতে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটি স্বতন্ত্র বিমান বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। আর এ লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের দেয়া একটি অটার বিমান, একটি ড্যাকোটা বিমান ও একটি অ্যালুনোট হেলিকপ্টার এবং বাঙালি বৈমানিক, কারিগরি পেশার বিমানসেনা ও বেসামরিক বৈমানিকসহ ৫৭ জন সদস্য নিয়ে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাত্রা শুরু করে। দুটি বিমান ও একটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালে ৫০টিরও বেশি বিমান অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে ‘কিলো ফ্লাইট’, যা বিজয়কে আরও ত্বরান্বিত করে।
দুপুরে ৫২ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে বিমান বাহিনী ঢাকার আকাশে বিভিন্ন ধরনের বিমানের সমন্বয়ে একটি মনোমুগ্ধকর ফ্লাইপাস্ট-এর আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বিমান বাহিনীর সকল ঘাঁটি, ইউনিট ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত ব্যানএয়ার কন্টিনজেন্টসমূহে ডকুমেন্টারি শো প্রদর্শন, দেশ ও বিমান বাহিনীর সার্বিক কল্যাণে দোয়া ও মোনাজাত এবং প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। এই দিবসটির উদযাপন বিমান বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যদের মধ্যে নতুন কর্মোদ্দীপনার সঞ্চার করবে বলে মনে করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
দিবসটির কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান। এসময় 'Kilo Flight, বিমান বাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর অবদান, বিমান বাহিনীর বর্তমান উন্নয়ন এবং বাফওয়ার উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উপর প্রস্তুতকৃত ডকুমেন্টারীসমূহ প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কিলো ফ্লাইটের বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রাক্তন বিমান বাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা, বিমানসেনা, এমওডিসি (এয়ার), অসামরিক সদস্যগণ এবং ঢাকাস্থ বিমান বাহিনীর সকল স্তরের পরিবারের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী প্রধান তাঁর বক্তব্যে বিমান বাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও বিমান বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সক্রিয় ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
রেডিওটুডে নিউজ/মুনিয়া