বৃহস্পতিবার,

১০ অক্টোবর ২০২৪,

২৪ আশ্বিন ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

১০ অক্টোবর ২০২৪,

২৪ আশ্বিন ১৪৩১

Radio Today News

নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া ঢাকার কোনো বিকল্প নেই: ড. ইউনূস

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৯:২৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Google News
নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া ঢাকার কোনো বিকল্প নেই: ড. ইউনূস

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া ঢাকার কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের প্রয়োজনেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বোত্তম সম্পর্ক থাকতে হবে। ’ জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে (ডিডাব্লিউ) দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

বুধবার (১১ েসেপ্টেম্বর) ডয়চে ভেলে ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে।  

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে পানিবণ্টন এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচলের মতো অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় সমস্যার দিকেও ইঙ্গিত করেন ড. ইউনূস। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তার প্রশাসন নয়াদিল্লির সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।  
 
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সমস্যা সমাধানের আন্তর্জাতিক উপায় অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণভাবে এর সমাধান করবো। ’

তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছেন। এ কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। কোথা থেকে শুরু করবো সেটি নির্ধারণ করাই কঠিন, কারণ সব কিছু নতুনভাবে শুরু করতে হবে।  

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা (অন্তর্বর্তী সরকার) নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং সুশাসনের সঙ্গে যা কিছু যায়, তার সব কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ’

সংবিধান সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের প্রধান বিষয়গুলোর ওপর নজর দেওয়া এবং একটি ঐকমত্য তৈরি করা উচিত। আমরা ঐকমত্য ছাড়া কিছু করতে পারি না, কারণ এটিই আমাদের শক্তি। ’ 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমার তো অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা না। অগ্রাধিকারগুলো সামনে এসে গেছে। আমি বাছাই করার সুযোগও পাইনি। শান্তিশৃঙ্খলা হলো সবার প্রথমে। যেহেতু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা আসছি, সরকার গঠন করেছি, কাজেই প্রথম দায়িত্ব হলো শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এটার ওপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে। এ রকম বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে হয় নাই। ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ জনগণ এগিয়ে এসেছে। এমন কোনো লোক ছিল না যে এটাতে শরিক মনে করে নাই। জনমত নির্বিশেষ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে। আমরা একটা বিরাট দায়িত্ব নিয়ে আসছি। এদিকে হলো বিপ্লব আর এদিকে স্বপ্ন। শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব। মানুষের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা। আমাদের দায়িত্ব অনেক। অর্থনীতি বিশৃঙ্খল, ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে মানুষ এত বিক্ষুব্ধ। সবকিছু লুটপাট। এটা লুটের একটা সরকার ছিল। কাজেই সেই লুটের সরকার থেকে সত্যিকার সরকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা—এটাও মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা। এবং এটা দ্রুত দেখতে চায়। সেগুলো আমাদের করার চেষ্টা। এক মাসের মধ্যে আমাদের যতটুকু সম্ভব করেছি। ’

রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান পুনর্লিখনের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা মস্ত বড় সুযোগ। এই সুযোগ জাতির জীবনে আর আসবে কিনা জানি না। না আসাটাই স্বাভাবিক হোক। গোড়াতে হাত দিতে হবে, সংবিধানে হাত দিতে হবে। তো সেখানে প্রশ্ন হচ্ছে—সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে, নাকি এই সংবিধানই কিছু সংশোধন করা হবে? এ বিষয়ে মতভেদ আছে। এ জন্য কমিশন হবে, বিচার বিবেচনা করবে, একমত হবে। এর ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা নির্বাচনের রূপরেখা ঠিক করতে পারছি না। কী ধরনের নির্বাচন হবে, কী কী নির্বাচন হবে—সবকিছুই সংবিধানের ভেতরে থাকবে। পুরো আন্দোলনের ব্র্যান্ড নেম হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা। আমরা সেই আকাঙ্ক্ষার অংশীদার। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি যেন আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পূরণ করতে পারি। ’

ব্যবসা ও অর্থনীতিকে পুনরায় সন্তোষজনক অবস্থানে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘লুটপাটের একটি অর্থনীতি। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল নিজের টাকাপয়সা করার আগ্রহ। ৬০ হাজার কোটি টাকা শুধু ছাপানো হয়েছে তাদের সুবিধার জন্য; কিন্তু মানুষের যে মূল্যস্ফীতি হবে, এটার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ ছিল না। ব্যাংকিং সিস্টেম পুরোটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলতে কোনো জিনিস ছিল না। এগুলো সব কিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হচ্ছে। সব কিছু নতুন করে করতে হচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে হলে, সামনে নিয়ে যেতে হলে করতে হবে। আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ভিত্তিটা করতে হবে। কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। সবটা পেরে গেছি তা না। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব আছে। বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিশাল বিশাল অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো শোধ করার পালা এসেছে আমাদের ওপরে। ওনারা নিয়ে গেছেন, ভোগদখল করেছেন। এখন টাকাটা জনগণকে শোধ করতে হবে। সেই পরিশোধের টাকা কোথা থেকে আসবে, কীভাবে আসবে—এটা আমাদের বড় চিন্তা। আমরা পৃথিবীর সামনে এমন একটা রাষ্ট্র হতে চাই না, যে তার অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে না। আমরা অঙ্গীকার রক্ষা করতে চাই। অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপরে দাঁড় করাতে চাই, যেন ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি না হয়। ’

সুশাসনের নিশ্চিতের বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘চেষ্টা করছি আমরা সুশাসন ফেরানোর, কিন্তু পুরোপুরি হয়নি। অনেক লোক পালিয়ে গেছেন, যারা জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিলেন। অথবা যারা আছেন, তাদের সহকর্মীরা তাদের ওপর ভয়ানক বিক্ষুব্ধ। বিক্ষোভের মুখে তারা পদত্যাগ করে চলে গেছেন। কাজেই এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। জনপ্রশাসনে এই শূন্যতা পূরণ আবার মুশকিল। এরে দিলেন ওরে কেন দিলেন না ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন উঠছে। তো এর মধ্য থেকেই আমরা মানুষকে বোঝাচ্ছি; দেখো, আমাদের বিবেচনায় যেটা সঠিক, সেটাই আমরা করছি। আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। বহু পরিবর্তন হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। সব ভিসিই (উপাচার্য) চলে গেছেন। ভিসি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে প্রোভিসি দিতে হচ্ছে। এই নিয়োগে সবাই খুশি। আবার নতুন করে বিচারব্যবস্থা চালু হবে। অনেকগুলো পরিবর্তন আমাদের একসঙ্গে করতে হচ্ছে। অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ’

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘না, এখনো সন্তুষ্ট হওয়ার সময় আসে নাই তো। আমাদের প্রথম দৃষ্টি হচ্ছে তালিকা করা, যেটার কথা আপনি বললেন। আমরা প্রত্যেকের তথ্য নিয়ে ডেটাবেজ তৈরি করছি। আমাদের ভয় হলো, আমরা যদি এটা না করি কিছুদিনের মধ্যে ভুয়া শহীদ ইত্যাদি শুরু হয়ে যাবে। কাজেই এটা থেকে আমরা বাঁচতে চাই। আমরা ওয়াদা করেছি, প্রত্যেকটা শহীদ পরিবারের দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা গ্রহণ করব। কাজেই এটার সংখ্যা নির্দিষ্ট হয়ে যেতে হবে। যেন এক বছর পরে কেউ এসে না বলতে পারে যে আমার পরিবার শহীদের পরিবার। আমরা খুঁজে খুঁজে বের করছি। আমরা একটা ফাউন্ডেশন করেছি। একটা স্থায়ী ফাউন্ডেশন তাদের পরিবারকে দেখাশোনা করার জন্য। যারা বেঁচে আছে, তাদের মিলিয়ে আমরা কর্মসূচি নিচ্ছি। ’

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে, এমন প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি পুরোপুরি আশাবাদী। এটা না হলে তো এই সরকারের অর্থই হবে না। নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হিসেবে যেন গৃহীত হয়। তাহলে মনে করব যে আমাদের এই সময়টা সার্থক হয়েছে। সেটার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি লাগে, আইন লাগে। সংবিধান হলে নির্বাচনী আইন, নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। তাদের মতামত পাব। এই সরকারের বড় জিনিস হলো সংস্কার। এই সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। এই সুযোগ আর জীবনে ফিরে আসবে না। আমাদের সব কিছু কলাপ্স করে গেল—এমন যেন না হয়। হঠাৎ করেই সবকিছু জিরোতে গিয়ে পৌঁছাবে না। পুরাতন বাংলাদেশ ইতি। এটা নতুন বাংলাদেশ, আমরা নতুন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জেগে উঠব। ’

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের