
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আসন্ন দুর্গাপূজায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নানারকম ষড়যন্ত্রমূলক চেষ্টা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে। আর আগামীকাল ডাকসু নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে হয়, সে জন্যও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ ১০ জন উপদেষ্টা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিস্তারিত জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত বছর দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভালো অভিজ্ঞতা ছিল, গত বছরের অভিজ্ঞতা যেন এ বছরও কাজে লাগানো যায়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এবার সব ধরনের নিরাপত্তা যেন আগে থেকেই নেওয়া হয়, যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দেশের সব ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রেস সচিব বলেন, বৈঠক থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্র্রতিক সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যে ঘটনাগুলো ঘটছে স্থানীয় প্রশাসনকে সেগুলো শক্তভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
রাজনৈতিক ঐক্য আরো জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় বৈঠকে। সেখানে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যেন পারস্পরিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় রাখে এবং নির্বাচন ঘিরে কোনোভাবেই নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখার দিকেও বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়।
শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঝটিকা মিছিলসহ যেকোনো বেআইনি সমাবেশ কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখা হবে। এর পেছনে যারা সক্রিয় থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধর্ম উপদেষ্টা খুব শিগগিরই সব সংগঠনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে আরো সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনকে আগাম প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, দেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে পতিত ও পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো আরো মরিয়া ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার লক্ষ্যে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এ কারণে বিষয়টি কেবল আইন-শৃঙ্খলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এখন এটি জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
বৈঠকে জোর দিয়ে বলা হয়, দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারের অভিমত হলো—জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় জনগণের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকা অপরিহার্য।
জোর দিয়ে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেভাবেই হোক ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি এই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন হবে এবং সেই বিষয়ে যত ধরনের প্রস্তুতি লাগে সেগুলো নেওয়া হচ্ছে।
প্রেস সচিব বলেন, পরাজিত শক্তি বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে সব শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে, যা সার্বিক নিরাপত্তার প্রশ্ন। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৈঠক থেকে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের অসন্তোষ দূর করতে ও তাঁদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করতে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বদলিকৃতদের আগের জায়গায় ফেরানোর প্রক্রিয়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাময়িক বরখাস্তদের আদেশ পরীক্ষা করা হচ্ছে। কর্মবিরতির কোনো প্রয়োজন নেই বলে সরকার মনে করে।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকে ৯ জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এছাড়াও বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) খোদা বকশ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম