
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে আলোচনার পর এখন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাচ্ছে দলটি। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক সংগঠন। স্বাভাবিকভাবেই দেশের বিভিন্ন আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। জরিপে এরকম তথ্যও এসেছে। ফলে দলের ভেতরকার সমস্যা নিরসনের জন্যও সাংগঠনিকভাবে চেষ্টা চলছে। কারণ একাধিক নয়, এবার একজন প্রার্থীকেই ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হবে—বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
এদিকে সরকার পক্ষের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের তৃতীয় দিনে বিএনপি জানিয়েছে যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের পক্ষপাতী নয় তারা। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপিসহ অন্যান্য দল এ কাউন্সিল গঠনের পক্ষে। ফলে এ দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানগত দূরত্ব রয়েছে এখনও।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মানবাধিকার কমিশন এবং প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান পদে এনসিসির মাধ্যমে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। পৃথক আইনে এতদিন নিয়োগ হলেও সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের কারণে আদতে প্রধানমন্ত্রীই এসব নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
সরকারপ্রধানের এই ক্ষমতা কমাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতি, সংসদের উভয় কক্ষের স্পিকার, দুই বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং সরকারি ও প্রধান বিরোধী দলের বাইরে থেকে একজন নির্বাচিত এমপি নিয়ে এনসিসি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। ৯ সদস্যের এই কাউন্সিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবে বলে প্রস্তাব করেছে। বিএনপি শুরু থেকেই এনসিসি গঠনের বিরোধী।
অন্যদিকে দলীয় অনুগত ব্যক্তি যাতে রাষ্ট্রপতি হতে না পারেন—সে জন্য কমিশন প্রস্তাব করেছে ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশনও হবে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’। এ পদ্ধতিতে জেলার সব প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি ভোট দেবেন। প্রতিটি জেলার ভোটের সংখ্যা হবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও বিরোধিতা করেছে বিএনপি। একই অবস্থান এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, ১২ দলীয় জোটের।
সালাহউদ্দিন বলেছেন, বিএনপি বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়।
ফলে বিএনপি তার অবস্থানে অনড় রয়েছে। এ বিষয়েও জামায়াতের নায়েবে আমির বলেছেন, তারা ইলেকটোরাল কলেজের ধারণার বিরোধী নয়। অর্থাৎ তারা সরকারের প্রস্তাবে রাজি। ফলে আলোচনার টেবিলে ভিন্নমত থাকলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের পর বিএনপি এখন নির্বাচনী মাঠেও কাজ শুরু করেছে। বিশেষ করে দলীয় মনোনয়ন যারা চান তাদের ব্যাপারে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন, প্রার্থী বাছাই এবং সাংগঠনিক কিছু কাজকর্মসহ নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় যে কাজগুলো থাকে সেগুলোর গতি বাড়িয়েছি আমরা।’
জানা গেছে, প্রার্থী মনোনয়নে তরুণ নেতারা অগ্রাধিকার পেতে পারেন। তবে প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতারাও থাকবেন সাথে। নবীন–প্রবীণের একটা ভারসাম্য রাখা হবে—বলে জানান এক দলীয় নেতা।
গত রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে—এ সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি এটা টেলিভিশনে দেখেছি, এটাকে আমি ফরমাল, অফিশিয়াল ভাবতে পারতেছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো কথাবার্তা হয় নাই, কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতেছি। যখনই হবে, যখনই হয় যাতে আমরা ইলেকশনটা “ডেলিভার” করতে পারি।’
ফলে সরকার কী সিদ্ধান্ত দেবে, এর অপেক্ষায় ইসি। তবে প্রধান দল হিসেবে বিএনপি আলোচনার টেবিলে ও মাঠপর্যায়ে সব জায়গাতেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম