
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। যা অন্তর্বর্তী সরকারের অস্বচ্ছতা, স্ববিরোধিতা ও জনগণের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়ার লক্ষণকে প্রমাণ করে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সরকারকে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক সংস্কারের পাশাপাশি পক্ষপাতিত্বহীন হতে হবে। দায়িত্বসহকারে নির্বাচনের সুষ্ঠু সমন্বয় করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: দায়িত্ব ও ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, গত ১৫ বছরে মিথ্যা মামলা থেকে সাধারণ জনগণ ও শ্রমিক মুক্তি পায়নি। কিন্তু ক্ষমতাবানদের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে, যেমন- প্রধান উপদেষ্টার। গত একবছরে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। এখনও বিচার বিভাগের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত উপরের আদেশে হয়।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, এই মুহূর্তে মব সন্ত্রাস হচ্ছে কখনো পদ দখল করতে, জমি দখল করতে এবং কখনো মতাদর্শিকভাবে আধিপত্য ঘটাতে। এই বিষয়ে সরকারের কোনো সন্তোষজনক ভূমিকা দেখা যায়নি। লিঙ্গীয়, জাতিগত, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক- এই চার বৈষম্য দূর না করে সরকার বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলছে। যা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত।
তিনি বলেন, আমেরিকার সঙ্গে গোপন, নতজানুমূলক এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি জনগণের আড়ালে হয়েছে। সেই চুক্তি না প্রকাশ করার শর্তে সরকার ‘নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ করেছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের সামগ্রিক পর্যালোচনা করে লেখক-গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের কতগুলো আকাঙ্ক্ষা অনেক মূর্ত ও স্পষ্ট হয়েছে। আগামীতে কোনো শাসকদলের পক্ষেই আগের মত একচেটিয়া দুঃশাসন চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু বলেন, সরকার ১১টি কমিশন করলেও অর্থ কমিশন করেনি। কর্মসংসস্থান সংক্রান্ত নীতিও প্রণয়ন হয়নি। চিনিকল চালুর জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে চিনিকল চালুর প্রস্তাব থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় প্রত্যাখান করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বিদেশি বিনিয়োগের ওপর যত আগ্রহী, ততটা ভর্তুকি দিয়ে এই চিনিকলগুলো চালু করতে আগ্রহী নয়।
স্থপতি ফারহানা শারমিন ইমু বলেন, সরকারের জুলাই যোদ্ধা পুনর্বাসন কার্যক্রমে ধোঁয়াশা আছে। ক্ষতিপূরণের এমাউন্টের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ অধিদপ্তর এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে মধ্যে ভিন্নতা থেকে যাচ্ছে। এই যে বিরাটাকার অসমন্বয়হীনতা ও সরকারের উদাসীনতা। এর মূল কারণ হচ্ছে- নিম্নবিত্ত শ্রেণির জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি সরকারের শ্রেণি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম