শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার,

২৬ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

অধিগ্রহণ জটিলতায় স্থবির জবির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ

হাসানাত হৃদয়, জবি

প্রকাশিত: ১৬:১৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৬:১৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

Google News
অধিগ্রহণ জটিলতায়  স্থবির জবির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ

২০১৬ সালে হল আন্দোলনের মুখে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু টাকা হাতে পাওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণভাবে ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজটাও সমাপ্ত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১৮৮.৬০ একর জমি৷ অধিগ্রহণ করতে এখনও বাকি ১১.৪০ একর জমি। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বাকি ভূমি পরে অধিগ্রহণ করার কথা বলা হয়। 

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন' প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। পরের বছর ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের নকশা দেখেন প্রধানমন্ত্রী। উক্ত প্রকল্পের আওতায় ছিল ভূমি অধিগ্রহণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, মাস্টারপ্ল্যান, বালু ভরাট, লেক খনন, অভ্যন্তরীণ ড্রেন ও সারফেস নির্মাণ ইত্যাদি। কাজের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু কাজের মেয়াদ শুধু দফায় দফায় বাড়ানোই হয়েছে। বাস্তবে কাজের অগ্রগতি একেবারেই হতাশাজনক। এদিকে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ ইমদাদুল হক যোগদানের পর অনিয়মের দায়ে পূর্বের মাস্টারপ্ল্যানের পুরো প্রক্রিয়াই বাতিল করেন। এখনও পর্যন্ত নতুন মাস্টারপ্ল্যানটাও চূড়ান্ত হয়নি। এখানেও চলছে এক ধরণের গড়িমসি ভাব। 

এদিকে অধিগ্রহণ অসম্পূর্ণ রেখেই বাদ রেখেই চলতি বছরের প্রথমদিকে অতি ধীর গতিতে শুরু হয় ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। কিন্তু সময়মত বাকি ১১.৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিগ্রহণকৃত ভূমির দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমাংশে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ৷ কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণাংশের কোনদিক থেকে বাকি ১১.৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে তা নিশ্চিত না হওয়ায় সেদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও এই জটিলতার ফলে আটকে আছে ক্যাম্পাসের বালু ভরাট, লেক খনন এমনকি মাস্টারপ্ল্যানের কাজও। এককথায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ চলছে অনেকটা কচ্ছপগতিতে। আর, এবার অধিগ্রহণ জটিলতায় সেই কাজও যেন অনিশ্চয়তার মুখে পড়লো। দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েও কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, বাকি ভূমি অধিগ্রহণ একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী দুই তিন বছরেও এই ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবে বলে মনে হয়না। ফলে, পূর্ণাঙ্গ সীমানা প্রাচীর ও বালু ভরাট করে ক্যাম্পাস ভবন নির্মাণের উপযোগী করতে আরও বহুবছর লেগে যাবে। এককথায় এই ক্যাম্পাস নিয়ে আমরা সম্পূর্ণ হতাশ।'

নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণে স্থবিরতার প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সহ সভাপতি সুমাইয়া সোমা বলেন, 'এই প্রকল্পটির মেয়াদ বারবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। অধিগ্রহণের নামে বিলম্ব করা কাজের গাফিলতি ছাড়া কিছুই নয়। প্রকল্পে যে পরিমাণ অনিয়ম, লুটপাটের ভাগ বাটোয়ারা হচ্ছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস নির্মাণের পরিবর্তে পকেট ভারি করতে বেশি ব্যস্ত।'

বাকি ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রেজিস্ট্রার (স্টেট) কামাল হোসেন সরকার জানান, ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পাশে বাংলাদেশ রেওলয়ে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিগ্রহণকৃত জমির মাঝে ৪২ শতাংশ জায়গা থেকে গেছে। এটা অধিগ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে এখানে বস্তি এলাকা হয়ে যাবে। এটা অধিগ্রহণের অনুমতি পেতে দেড়বছর ধরে ঘুরছি। তবে, এটা অধিগ্রহণের অনুমোদন এখনও পর্যন্ত পাইনি। আশাকরি শীঘ্রই পেয়ে যাবো। তাছাড়া আরও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের চেষ্টা চলছে। এটা হয়ে গেলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন ফিজিবিলিটি টেস্ট (সম্ভাবনা পরীক্ষা) করবে। তারপর অধিগ্রহণ করা যাবে।'

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সামান্য কিছু ভূমি অধিগ্রহণ করতে বাকি রয়েছে। এটার অধিগ্রহণও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শীঘ্রই তা সম্পন্ন হয়ে যাবে।

এমএমএস

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের