
ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) গাজা উপত্যকার পূর্ণ দখল, মানবিক সাহায্য বন্ধ এবং অঞ্চলটি থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়েছেন।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, বেন-গভির ইসরায়েলের আর্মি রেডিওকে বলেন, চুক্তিতে পৌঁছানোর ইচ্ছা এটি একটি ভয়াবহ ভুল। আমাদের এক মুহূর্তও থামা উচিত নয়। আমাদের পূর্ণ বিজয় অর্জন করতে হবে, সমগ্র গাজা দখল করতে হবে, মানবিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময় চুক্তির জন্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার চলমান প্রচেষ্টার মধ্যে তার এই আহ্বান এলো।
গাজায় ২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও ইসরায়েল তার ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জিম্মিদের উদ্ধার এবং হামাসকে ধ্বংস করা।
ইসরায়েলের অনুমান, গাজায় প্রায় ৫০ জন জিম্মি রয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ১০৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দী ইসরায়েলি কারাগারে কঠোর পরিস্থিতিতে আটক রয়েছেন। নির্যাতন, অনাহার এবং চিকিৎসা অবহেলার ফলে একাধিক বন্দীর মৃত্যু ঘটেছে।
ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন-এর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে গিয়ে বেন-গভির বলেছেন, প্রস্তাবিত জিম্মি চুক্তি এবং যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করার কোনো ইচ্ছা তার নেই।
তিনি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচকে উদীয়মান চুক্তিটি আটকাতে তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দাবি করেন, 'গাজায় প্রকৃত বিজয় অর্জনের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ রয়েছে, যার মধ্যে হামাসের পতন এবং দেশত্যাগকে উৎসাহিত করা অন্তর্ভুক্ত।'
ইসরায়েলি উগ্র ডানপন্থী এই নেতা এবং স্মোট্রিচ - উভয়ই ধারাবাহিকভাবে যে কোনো ধরণের যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে গাজা দখল, বসতি র্নির্মাণ এবং ফিলিস্তিনিদের এই ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করার পক্ষে কথা বলে আসছেন।
বুধবার হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক ত্রাণসহ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারীদের জমা দেওয়া প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা'র বলেছেন, একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব, এ বিষয়ে 'ইতিবাচক ইঙ্গিত' রয়েছে।
হামাস বারবার ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন বন্ধ এবং গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
তবে ইসরায়েলি উগ্র ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একটি বিস্তৃত চুক্তির বিরোধিতা করেছেন, বরং সীমিত বা অল্প সময়ের যুদ্ধবিরতির কথা বলে আসছেন। কেননা এর ফলে ফলে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবেন। এই অবস্থানকে ব্যাপকভাবে তার 'রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার প্রচেষ্টা' হিসেবে দেখা হয়।
গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল 'প্রয়োজনীয় শর্ত' মেনে নিয়েছে। তবে 'প্রয়োজনীয় শর্ত'র বিষয়টি বিস্তারিত জানাননি তিনি।
যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ৫৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলারও মুখোমুখি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম