ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী উৎসবের সমাপনী রাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়। নগরবাউল জেমসের কনসার্ট চলাকালীন বহিরাগতদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বিশৃঙ্খলার কারণে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
কনসার্ট বাতিলের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নগরবাউল জেমস বলেন, ‘এই কনসার্ট বাতিলের পেছনে আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতা রয়েছে।’ তিনি জানান, তাঁর গান শোনার জন্য কয়েক হাজার অনিবন্ধিত দর্শক স্কুলের বাইরে ভিড় করেন। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় তাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্কুলের বাইরে দুটি বড় প্রজেক্টর বসানো হলেও তাতে বহিরাগতদের অসন্তোষ কমেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে উত্তেজিত জনতা স্কুলের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। বাধা দেওয়া হলে তারা স্কুলপ্রাঙ্গণ ও মঞ্চ লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেমসের মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন জানান, ‘ফরিদপুরের ওই কনসার্টে অংশ নিতে আমরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পৌঁছাই। এরপর গেস্ট হাউসে অবস্থান করছিলাম। সেখানেই জানতে পারি অনুষ্ঠানস্থলে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করলে আয়োজকরা অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন এবং সেটি আমাদের জানানো হয়। এরপর আমরা ঢাকায় ফিরে আসি।’
এদিকে, সেদিন কনসার্টস্থলে ঠিক কী ঘটেছিল এবং কেন এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল–সে বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন একই অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা জনপ্রিয় সঞ্চালক শ্রাবণ্য। ফরিদপুর থেকে ঢাকায় ফিরে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, সন্ধ্যার পর মঞ্চে র্যাফেল ড্র চলছিল। এরপরই মূল আকর্ষণ হিসেবে নগরবাউল জেমসের গান পরিবেশনের কথা ছিল।
হঠাৎ করেই বৃষ্টির মতো পাথর ও ইট মঞ্চের দিকে ছুড়ে মারা শুরু হয় বলে জানান তিনি। শ্রাবণ্য লেখেন, ‘হঠাৎ একটি বড় পাথর ঠিক আমার সামনে এসে পড়ল। মুহূর্তের মধ্যে সব বদলে গেল। এক বুক আশা আর ভালোবাসা নিয়ে আসা মানুষের চোখেমুখে তখন শুধু আতঙ্ক।’
তিনি আরও জানান, প্রায় ১৫ হাজার মানুষের ভিড় সামলাতে আয়োজকরা হিমশিম খাচ্ছিলেন। ইটের আঘাতে অনুষ্ঠানস্থলেই প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকেই আহত হন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন। দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলার পর নিরাপত্তার স্বার্থে অনুষ্ঠানটি পণ্ড ঘোষণা করতে বাধ্য হন আয়োজকরা।
উপস্থাপিকা শ্রাবণ্য আক্ষেপ করে বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে সবাই আমাদের পারিশ্রমিক পেয়েছি। যে মানসিক আঘাত এবং হাজারো মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, তা কোনো টাকা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

