শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবার,

২০ এপ্রিল ২০২৪,

৬ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

পাহাড়ে মসলা চাষে ঝুঁকছে কৃষক

রেডিও টুডে ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১ মার্চ ২০২২

আপডেট: ২০:৪৯, ১ মার্চ ২০২২

Google News
পাহাড়ে মসলা চাষে ঝুঁকছে কৃষক

ছবি: পাহাড়ে মসলা চাষ

`আগে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য শষ্য চাষ করতাম। এখন সেটি বাদ দিয়ে দিয়েছি। জুমের পরিবর্তে এখনদারুচিনি, গোলমরিচ, তেজপাতা জাতীয় মসলার চাষ শুরু করেছি।’

মসলা চাষ নিয়ে কথাগুলো বলেছেন রাঙামাটি সদর উপজেলা মগবান ইউনিয়নের বরাদম এলাকার চাষী যুদ্ধমনি চাকমা। তিন বছর আগেওযিনি ধানসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য শষ্য চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সময়ের ব্যবধানে তিনি এখন ঝুঁকছেন মসলা চাষে। তুলনামূলকলাভজনক হওয়ায় জুম চাষের পরিবর্তে নিজের চাষাবাদের জায়গায় সৃজন করেছেন মশলা বাগান।

শুধু যুদ্ধমনি চাকমা নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নেয়া একটি প্রকল্পের কারণে এখন পাহাড়ী এলাকায় মশলা জাতীয় শষ্য উৎপাদনে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। যে কারণে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় মশলা চাষে ঝুঁকছে সেখানকার মানুষ। এক সময় পাহাড়েজুম চাষ মানেই যেখানে ছিল ধান, আদা, হলুদ চাষ। পাহাড়ের ঢালে তখন নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে এসব চাষাবাদ করতেন পাহাড়ীজনগোষ্ঠি। সেই দৃশ্য এখন পাল্টে যাচ্ছে, এখন সেখানে চাষ হচ্ছে উচ্চ মূল্যের দারুচিনি, আলুবোখারা, গোলমরিচ, তেজপাতাসহ নানাজাতের মশলা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর মেয়াদী ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ’ শিরোনামে পাইলটপ্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুন মাসে বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত চলমান এই প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জেলার ২ হাজার ৬০০ জন মসলা বাগান সৃজন করেছেন। এই প্রকল্পের অধীনে অন্তত ২৬ হাজার একর জমিতে সৃজন করা মসলাবাগানে শুরু হয়েছে আলুবোখারা, দারুচিনি, গোলমরিচ, তেজপাতার মতো বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্য উৎপাদন। প্রকল্পের অধীনে সৃজন করাএসব মসলা বাগান দেখে এখন মসলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় কোন জলাবদ্ধতা হয়না। যে কারণে এখানে মসলা চাষ করা সহজ। তুলনামুলক দুর্গমএলাকা যেখানে খুব একটা চাষাবাদ হয় না সেসব এলাকার ঢালু স্থানে দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ, আলুবোখারা, জুমমরিচ প্রভৃতি ফসলএবং সমতলে মৌরী, মেথি মরিচ, নাগা মরিচ, কালজিরা ইত্যাদি মসলা ফসল চাষাবাদ করা যায়। অন্যদিকে, মসলা বিক্রি করে অধিক অর্থপাওয়া যায় বলে এখন পাহাড়ী এলাকার মানুষজন মসলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মসলা চাষ প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, এই এলাকার জমি মসলাজাতীয় ফসল ও ফলের বাগানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এসব ফসল কম ওজনদার, দীর্ঘদিন রাখা যায় এবং মূল্যবান হওয়ায় কৃষকরা নিজঘরে তা সংরক্ষণ করতে পারে। যে কারণে পাহাড়ে এখন মসলা চাষ বাড়ছে। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে আলুবোখরার নার্সারি করে চারা-কলমনিজেরা বিক্রি করছেন। আমাদের প্রকল্পের অধীনে আমরা ২ হাজার ৬০০ কৃষককে মসলা বাগান সৃজন করতে উদ্বুদ্ধ করেছি। তাদের চারা, সারও সেচ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছি।

পাহাড়ে এখনো অনেক অনাবাদি জমি রয়েছে যেখানে মসলা চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এ মসলার ফলন আসতে৩/৪ বছর সময় লাগে। তাই প্রকল্পের অধীনে যেসব মসলা বাগান সৃজন করা হয়েছে সেগুলো এখনো ফলন আসেনি। ফলন আসলে কৃষকরামসলা চাষে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন। তখন দেশে মসলার আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। মসলা জাতীয় ফসলের আবাদের ফলে কৃষকগণলাভবান হবেন। তাঁদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

এসঅাই

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের