ছবি: সংগৃহীত
ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জায় ১৯৫০ সাল থেকে গত ৭০ বছরে পাদ্রী এবং যাজকদের হাতে ২ লাখ ১৬ হাজারের বেশি শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। নিপীড়নের শিকার হওয়া শিশুদের অধিকাংশিই ছেলে শিশু। রোমান ক্যাথলিক চার্চে যৌন নিপীড়নের ঘটনার এক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে পাদ্রী এবং যাজকদের বিরুদ্ধে শিশু নিপীড়নের এই প্রমাণ মিলেছে। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়েছে।
ক্যাথলিক চার্চের স্কুলগুলোর শিক্ষকদের মতো সাধারণ সদস্যদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের হিসেবে ধরলে ফ্রান্সে নিপীড়নের শিকার শিশুর সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তদন্ত কমিশনের প্রধান জ্যঁ-মার্ক সোভ বলেছেন, নিপীড়নের এই পরিসংখ্যান ধারণার চেয়েও ভয়াবহ।
তদন্ত কমিশনের প্রধান জ্যঁ-মার্ক সোভ বলেছেন, তারা অন্তত ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ শিশু নির্যাতনকারী পাদ্রী এবং অন্যান্য যাজকের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন যারা চার্চে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের মতো বিষয়কে চরম উদাসীনভাবে নিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে চার্চের যাজকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এবং এবিষয়ে সতর্ক হওয়ার দাবীর মুখে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। জ্যঁ-মার্ক সোভ বলেন, দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে আদালত ও পুলিশের সহযোগীতায় চার্চের আর্কাইভে সংরক্ষিত নথি তদন্ত করে এবং নির্যাতনের শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় যা পরে অনুমোদন দেয় ফ্রান্সের ক্যাথলিক চার্চ।
এদিকে, প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফ্রান্সের চার্চগুলো শিশু নিপীড়নের ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক এবং ভীতিকর’ বলে উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়েছে। এই প্রতিবেদনকে ফ্রান্সের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট বলে মন্তব্য করেছেন নিপীড়নের শিকার একজন। তিনি বলেছেন, ক্যাথলিক চার্চগুলোর কর্মকাণ্ড মৌলিকভাবে পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।
আর লা প্যারোলে লিবারি বা ফ্রিড স্পিচ নামে ফ্রান্সের নির্যাতনের শিকার মানুষদের একটি সংগঠণের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সিস ডেভক্স বলেন, এঘটনার মধ্যদিয়ে ক্যাথলিক চার্চে নির্যাতনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস, নীতি-নৈতিকতা এবং শিশুদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে কয়েকটি কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ফরাসি ক্যাথলিক গির্জা কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে তদন্তের আদেশ দিয়েছিল। জঁ-মার্ক সোভ বলেছেন, ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে ক্যাথলিক চার্চ ‘ভুক্তভোগীদের প্রতি গভীর এবং এমনকি নিষ্ঠুর উদাসীনতা দেখিয়েছিল’।
আড়াই হাজার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ভূক্তভোগীদের মধ্যে ‘বিশাল সংখ্যক’ ছিল বিভিন্ন ধরনের সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রাক-কিশোর বয়সের ছেলে। তদন্তে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের ৬০ শতাংশই পরবর্তী জীবনে তাদের মানসিক এবং যৌন জীবনে মারাত্মক ব্যাঘাতের শিকার হয়েছেন।
রেডিওটুডে নিউজ/এসইউ/ইকে