
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য ৫০টির বেশি গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যলয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ভবনের সামনের নির্ধারিত ওই স্থানে এস্কেভেটর দিয়ে গাছগুলো উপড়ে ফেলেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তাদের অনুমতি ছাড়াই গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।
গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা গেছে। ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব ও গবেষণা কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার প্রয়োজন তুলে ধরে ওই স্থানে ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও গণিত ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আবু রুম্মান বলেন, আমরা প্রথমত গাছ কাটার বিপক্ষে। তবে আমাদের বিভাগের শ্রেণিকক্ষ সংকট, ল্যাব সংকট, শিক্ষকদের বসার জায়গা ও আমাদের চলাচলেরও জায়গা নেই। সেহেতু আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল রাখতে আমাদের ভবন দরকার। সে জায়গা থেকে পরিবেশের ন্যুনতম ক্ষতি করে হলেও আমাদের ভবন দরকার।
তবে দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এভাবে যত্রতত্র ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে আরেক দল শিক্ষার্থী। তারা বলছে, লেকচার থিয়েটারে সব একাডেমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গাছ কেটে সব বিভাগের আলাদা ভবন চাওয়া অযৌক্তিক। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
ভবন নির্মানের ঠিকাদার মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজের ভাষ্য, কয়েকদিন আগে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রুম্মান তাকে ফোন করে বলেছে কাজ শুরু করতে পারেন। সে জন্যই তিনি গাছ কেটে ভবনের কাজ শুরু করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে আবু রুম্মান বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি, কিন্তু এসব আলোচনা থেকে কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। গত ২৩ মার্চ এক বৈঠকে উপাচার্য মৌখিকভাবে কাজ শুরু করার সম্মতি দেন। তাই রোববার বিকেলে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে আমরা মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করি এবং তাকে নির্মাণকাজ শুরু করার অনুরোধ জানাই।
তবে কোনো শিক্ষার্থী প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি ছাড়া কোনো ঠিকাদারকে কাজ শুরু করতে বলতে পারে কিনা, জানতে চাইলে রুম্মান সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি শুধু বলেন, আমি মনে করি না, তারা শুধুমাত্র আমাদের অনুরোধের ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে গাছ কাটার খবর পেয়ে সেখানে ছুঁটে যান ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা। তারা গাছ কাটার প্রতিবাদ জানান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নাসির উদ্দীনসহ কয়েকজন শিক্ষকও ঘটনাস্থলে যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, কার অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হয়েছে, তারা জানেন না। পরে উপাচার্যের নির্দেশে গাছ উপড়ে ফেলা বন্ধ করা হয়।
উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, এতগুলো গাছ কাটা হয়েছে, আমি সেটা আগে জানতাম না। আমার কোনো অনুমতি ছাড়াই এটা করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালকও যদি বলেন, তিনি গাছ কাটার বিষয়ে জানতেন না। তাহলে এটা কীভাবে হলো, আমি বুঝতে পারছি না। আমরা আগেই জানিয়েছিলাম, মাস্টারপ্ল্যান দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্মাণকাজ চলবে না। সেই প্রক্রিয়া এখনও চলমান। আমরা শিগগিরই মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান করবো।
গাছ উপড়ে ফেলার প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’–এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনে (যেখানে গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে) গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম