মঙ্গলবার,

০১ জুলাই ২০২৫,

১৬ আষাঢ় ১৪৩২

মঙ্গলবার,

০১ জুলাই ২০২৫,

১৬ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পোস্টটি বিপজ্জনক: জুলকারনাইন

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:০৫, ৩০ জুন ২০২৫

Google News
আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পোস্টটি বিপজ্জনক: জুলকারনাইন

‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের আজকের ফেসবুক পোস্টটি কেবল সাংবাদিকতার ভূমিকা সম্পর্কে তার অজ্ঞতাই প্রকাশ করে না, বরং এটি একটি বিপজ্জনক কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়, যা শেখ হাসিনার শাসনের দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।’ আজ সোমবার (৩০ জুন) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন বিশিষ্ট অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।

জুলকারনাইন তার পোস্টে বলেন, ‘তার ভাষা হুমকিসূচক, সন্দেহপ্রবণ এবং গভীরভাবে গণতন্ত্রবিরোধী। সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশকে সন্ত্রাসবাদ বা গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে এক কাতারে ফেলে তিনি দেখিয়েছেন যে, হয় তিনি গণতন্ত্রের মূল্যবোধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, নতুবা তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে চান।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে হুইসেলব্লোয়ার, সচেতন নাগরিক ও অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো সাংবাদিকদের কাছে দলিল, ভিডিও ও অডিও ফাঁস করে সরকারের দুর্নীতির প্রমাণ তুলে ধরেছে। এসব তথ্যের মাধ্যমে ইতিহাস গড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্মোচন ঘটেছে—যেমন পেন্টাগন পেপারস থেকে শুরু করে পানামা পেপারস পর্যন্ত। বাংলাদেশেও সত্যে বিশ্বাসী অনেক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দলিল, স্ক্রিনশট, ভিডিও ও অডিও পাঠান। এসব দেশপ্রেমিক নাগরিককে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ বা ‘সন্ত্রাসীদের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা এক ঘৃণ্য ও স্বৈরতান্ত্রিক কৌশল, যার উদ্দেশ্য সাংবাদিকতা ও ভিন্নমত দমন করা।’

তিনি আরো বলেন, মন্ত্রী পদমর্যাদার আসিফ মাহমুদ দাবি করেছেন, ‘বিমানবন্দরের ফাঁস হওয়া ফুটেজ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কিন্তু প্রকৃত প্রশ্ন হলো—তিনি বিমানবন্দরে এমন কী করছিলেন, যা প্রকাশিত হওয়া নিয়ে এতটা আতঙ্কিত? যদি কোনো মন্ত্রী, তার বাবা বা আত্মীয়-স্বজন দুর্নীতিতে জড়ান, অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করেন বা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন—তবে কি তা ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা’র ছায়ায় লুকিয়ে রাখা উচিত? এটা কি গণতন্ত্র, না রাজতন্ত্র? 
সায়ের বলেন, তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ নিছক ভণ্ডামি। আসল হুমকি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার নয়, বরং সেসব মন্ত্রী ও তাদের আত্মীয়-স্বজন যারা কমিশন বাণিজ্য, ঘুষ এবং ব্যাবসায়িক সুবিধাবাদে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। তিনি যে ‘নিরাপত্তা’ চাইছেন, তা আসলে সাধারণ নাগরিকদের নয়—বরং রাজনীতিবিদ ও তাদের ঘনিষ্ঠদের দায়মুক্তির দাবিই।’

তিনি বলেন, ‘এর চেয়েও ভয়াবহ হলো, শেখ হাসিনার সরকারের যেসব মন্ত্রীর ভাষা একসময় এই সরকার বিরোধিতা করত, এখন সেই একই ভাষায় কথা বলছেন আসিফ মাহমুদ। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এমনকি সন্ত্রাসবাদের মতো গুরুতর বিষয়কে ব্যবহার করছেন সেন্সরশিপকে ন্যায্যতা দিতে ও তথ্যদাতাদের দমন করতে। এটা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূল্যবোধের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা। আপনার যা ইচ্ছে তাই করে দেশটাকে অনিয়েমের ক্ষেত্র তৈরি করবেন, আর তা প্রকাশ করলেই ষড়যন্ত্র খুঁজবেন তার জন্য তো সহস্রাধিক মানুষ রক্ত দেয়নি!’

তিনি আরো বলেন, ‘তার এই বক্তব্য মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য স্পষ্ট হুমকি। ফুটেজ ফাঁসকে যদি জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এরা পরিণত হচ্ছে কেবল আগের সরকারে একটা কার্বন কপি হিসেবে। যদি অনিয়মের তথ্য উন্মোচন করাকে অপরাধ বানানো হয়, তাহলে জবাবদিহিতার কী আর বাকি থাকে? এই মানসিকতাকে বিনা দ্বিধায় নিন্দা করতে হবে। সাংবাদিকতা সন্ত্রাস নয়। দুর্নীতি উন্মোচন গুপ্তচরবৃত্তি নয়। সত্য উন্মোচনকারীদের রক্ষা না করে যদি এই সরকার তাদের দমন করতে চায়, তবে এই অন্তর্বর্তী সরকার কেবল নাম বদলানো পুরোনো স্বৈরতন্ত্রিক হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে—আরো বেশি অহংকার ও দায়মুক্তির ভয়বহতা নিয়ে।’

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের