
‘আমার মানসম্মান সব গেছে, সবাই মুক্তি পাক। স্বামী এ ঘটনা শুইনা আমারে ফোনও দেয় না। আমি দুটি শিশুসন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই। আমি দশজনের শান্তি চাই, দেশের শান্তি চাই। আমার যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। আমি মামলা তুলে নেব।’ কুমিল্লার মুরাদনগরে নিপীড়নের শিকার সেই নারী রোববার সাংবাদিকদের কাছে এ আকুতি জানান।
গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিপীড়নের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার ফজর আলী নামে এক ব্যক্তিকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ফজরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফজর ছাড়া অন্য চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ– তারা ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছেন। এ অভিযোগে রোববার কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভাইরালকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– একই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে অনিক।
ধর্ষণ মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী নারী জানান, অভিযুক্ত ফজর আলী তাঁর বাবার বাড়ির এলাকারই বাসিন্দা। যখনই স্বামীর বাড়ি থেকে নিজ বাড়ি বেড়াতে আসেন, তখন বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতেন। গত বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তি কৌশলে তাঁর ঘরে প্রবেশ করে গলায় ছুরি ধরেন। এক পর্যায়ে খুনের ভয় দেখিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন। ফজর আলী ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে তাঁকে আটকে মারধর করেন।
ওই নারীর স্বজন বলছেন, মূল অভিযুক্ত ফজরের সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভুক্তভোগী নারীর কোনো সম্পর্ক ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতে খালি বাসা পেয়ে দরজা ভেঙে ফজর আলী তাঁকে ধর্ষণ করেন। এর পর আরও ৭-৮ জন ঘরে প্রবেশ করে সেই নারীর বিবস্ত্র অবস্থার দৃশ্য ভিডিও করেন। তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। পরে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পর এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মূল অভিযুক্তের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি ভাষ্য আসতে থাকে।
এদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও এবং ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম