তেহরানের খেলনা জাদুঘর : শৈশব স্মৃতির জীবন্ত ভুবন

সোমবার,

০৩ নভেম্বর ২০২৫,

১৯ কার্তিক ১৪৩২

সোমবার,

০৩ নভেম্বর ২০২৫,

১৯ কার্তিক ১৪৩২

Radio Today News

তেহরানের খেলনা জাদুঘর : শৈশব স্মৃতির জীবন্ত ভুবন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ৩ নভেম্বর ২০২৫

Google News
তেহরানের খেলনা জাদুঘর : শৈশব স্মৃতির জীবন্ত ভুবন

ইরানের রাজধানী তেহরানের কেন্দ্রস্থলে পুরোনো এক বাড়ি। ভেতরে পা রাখলেই মনে হবে সময় যেন পিছিয়ে গেছে। দেয়ালে রঙিন দেয়ালচিত্র, কাচের বাক্সে সাজানো কাঠের পুতুল, মাটির পশু, টিনের গাড়ি আর আটারির মত পুরোনো ভিডিও গেম-সবকিছু মিলিয়ে এ যেন জাদুকরী সময়ভ্রমণ। 

প্রাচীন পারস্য থেকে শুরু করে সোভিয়েত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র; নানা দেশ ও কালের খেলনা স্থান পেয়েছে এক ছাদের নিচে। এই অনন্য খেলনা জাদুঘরটি বড়-ছোট সব দর্শনার্থীকে ফিরিয়ে নিচ্ছে শৈশবের স্মৃতিময় দিনে।

জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতা ৪৬ বছর বয়সী আজাদেহ বায়াত। তিনি এএফপিকে বলেন, আমি সবসময়ই জাদুঘরটিকে শিশু ও কিশোরদের জন্য আকর্ষণীয় করার কথা ভেবেছি। কিন্তু এখন দেখছি বড়রাও নিয়মিতি এখানে আসছেন।
ছয় বছর সংস্কারের পর গত বছর এই জাদুঘরটি চালু করেন তিনি।

শিশুশিক্ষা গবেষক বায়াত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করেছেন দুই হাজারেরও বেশি খেলনা।

তার ভাষায়, ‘যখন শিশুরা তাদের বাবা-মা বা দাদু-নানুর সময়ের খেলনা দেখতে পায়, তখন তারা নিজেদের যুগের সঙ্গে পুরোনো প্রজন্মের সংযোগটা আরও ভালোভাবে বুঝতে শেখে।’

জাদুঘরের এক কোণায় কাচের বাক্সে নিঃসঙ্গ পড়ে আছে প্রাচীন পারস্যের মাটির তৈরি এক পশুমূর্তি। এটি নীরবে সাক্ষ্য দিচ্ছে খেলনার হাজার বছরের বিবর্তনের।

পাশেই তাকজুড়ে সারি সারি সাজানো কাঠের ‘ম্যাট্রিয়োশকা’ পুতুল; গাল লাল, পরনে ঐতিহ্যবাহী রুশ পোশাক। এই পুতুল মূলত রুশ সংস্কৃতির প্রতীক। তাকের অপর পাশে ঝলমল করছে উজ্জ্বল রঙে আঁকা সোভিয়েত আমলের টিনের খেলনা গাড়ি।

এক কোণে রাখা ১৯৮০-এর দশকের জনপ্রিয় ভিডিও গেম কনসোল ‘আটারি’।

এছাড়া, রয়েছে আমেরিকান ‘বার্বি’ পুতুল, যেগুলো পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে একসময় ইরানে নিষিদ্ধ ছিল। তবে বার্বির জনপ্রিয়তা দেখে ২০০০ সালের শুরুর দিকে ইরানি কর্তৃপক্ষও ‘সারা’ ও ‘দারা’ নামে দেশীয় সংস্করণের পুতুল বাজারে আনে। তবে অবশ্য সেগুলো পর্দাসম্মত পোশাকে তৈরি করা হয়। 
স্বর্ণের দোকানে কর্মচারী ২৭ বছর বয়সী মাইদেহ মির্জায়ি জাদুঘরে এসে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। 

তিনি বলেন, একসময় সারা ও দারা পুতুল নিয়ে এত প্রচারণা ছিল যে তাদের ছবি বই থেকে শুরু করে খাতার মলাটেও দেখা যেত।

অন্যপাশে জাদুঘরের এক কর্মী স্কুল শিক্ষার্থীদের পাপেট চালনার কৌশল দেখাচ্ছিলেন। এসব পুতুল স্থানীয়ভাবে ‘আলি ভারজে’ বা ‘আলি দ্য জাম্পার’ নামে পরিচিত। লাঠি বা সুতা টানলেই পুতুলটি নড়াচড়া করে।

সম্প্রতি এই জাদুঘরে জনপ্রিয় বেলজিয়ান চরিত্র ‘টিনটিন’ থিমে একটি অনুষ্ঠান এবং ছায়ানাট্য প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।

৩১ বছর বয়সী শরীরচর্চা প্রশিক্ষক মেহদি ফাতেহ বলেন, ‘এই খেলনাগুলো দিয়ে ছোটবেলায় বন্ধুরা মিলে রাস্তা কিংবা বাড়িতে কত খেলতাম! এগুলো দেখে সেসব মনে পড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের শিশুরা হয়তো ভাববে, আমাদের পুতুলগুলো ছিল সাদামাটা ও পুরোনো ধাঁচের। কিন্তু সেই খেলনাগুলোর সঙ্গেই আমরা বেড়ে উঠেছিলাম।’

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের