মোল্লা খয়েরখা, মাঝখানে সাদা পাঞ্জাবি ও কালো পাগড়ি পরিহিতি
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মোতায়েন প্রতিটি বিদেশি সৈন্যকে দখলদার মনে করে তালেবান। কাজেই আমেরিকাকে কূটনীতিক ছাড়া বাকি সব সেনা ও বেসামরিক ব্যক্তিকে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আর ক্ষমতায় গেলে তালেবানই পশ্চিমা কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেবে।
ইরানের ইংরেজি ভাষার নিউজ চ্যানেল প্রেসটিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তালেবানের সিনিয়র নেতা মোল্লা খয়রুল্লাহ খয়েরখা। বুধবার প্রচারিত এ সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, আমেরিকার সঙ্গে এ বিষয়ে তালেবানের আগেই সমঝোতা হয়েছে।
মোল্লা খয়েরখা ২০২০ সালে আমেরিকার সঙ্গে তালেবানের কথিত শান্তি আলোচক দলের সদস্য ছিলেন এবং সম্প্রতি ইরানের মধ্যস্থতায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে তেহরানে যে বৈঠক হয় তাতেও অংশগ্রহণ করেন।
তিনি প্রেসটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তারা এ কথা মেনে নিয়েছে যে, কূটনীতিক ছাড়া সব মার্কিন নাগরিককে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হবে এবং এ কথাটি সুস্পষ্টভাবে [চুক্তিতে] লেখা রয়েছে।
এই তালেবান নেতা বলেন, সব ন্যাটো সেনাকে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হবে; এমনকি যেসব সেনাকে তাদের দূতাবাসগুলো রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে তাদেরকেও চলে যেতে হবে। কারণ, আমরা যদি আফগানিস্তানের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করি তাহলে তাদের দূতাবাস ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা আমরাই নিশ্চিত করব।
সাক্ষাৎকারের অন্য অংশে মোল্লা খয়েরখা বলেন, আমেরিকা ও তার ন্যাটো মিত্র দেশগুলো আফগানিস্তানে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার নামে এ দেশে দেড় লাখ সেনা মোতায়েন করেছে কিন্তু নিরাপত্তা দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, অতীতে ব্রিটিশ ও সোভিয়েত সেনারাও আফগানিস্তানে এসে টিকতে পারেনি এবং মার্কিন সরকার যদি আবার এদেশে আসতে চায় তবে তাকে গত ২০ বছরের পরিণতি ভোগ করতে হবে। কাজেই আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রত্যাবর্তনে মার্কিন বা আফগান জনগণ কারোই লাভ হবে না।
সাক্ষাৎকারের আরেক জায়গায় মোল্লা খয়েরখা দাবি করেন, সামরিক আগ্রাসনের চেয়ে ‘আলোচনা’ ও ‘রাজনৈতিক সমাধানকে’ প্রাধান্য দেয় তালেবান। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সমাধানের চেষ্টা করছি যাতে আফগান জনগণই তাদের সরকার নির্বাচিত করতে পারে। সেটা হতে পারে কাউন্সিলভিত্তিক বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায়। এই প্রক্রিয়া নিয়েই মূলত আলোচনা চলছে।
তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সবকিছু যদি তালেবানের বিপক্ষে চলে যায় তাহলে তারা আলোচনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন।
মোল্লা খয়রুল্লাহ খয়েরখা বলেন, তালেবান নেতারা এখনো রাজধানী কাবুলসহ বড় শহরগুলো দখলের নির্দেশ দেননি। তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চান।
তিনি বলেন, সাবেক সোভিয়েত সমর্থিত সরকার যেমন আফগানিস্তানে টিকতে পারেনি; বর্তমান মার্কিন সমর্থিত সরকারও টিকতে পারবে না। এদেশের জনগণ একথা জানে এবং এ কারণেই বড় ধরনের সংঘর্ষ ছাড়াই একের পর এক জেলার পতন হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
সূত্র: পার্সটুডে
রেডিওটুডে নিউজ/এসআই