
৬০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সাড়ে ৫৭ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদের (জয়) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাটি করা হয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি সজীব আহমেদ ওয়াজেদের নামে মোট ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ৯৭৮ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যা পাওয়া যায়।
আর এফডিআর, আসবাবপত্র, হাতে নগদ ও ব্যাংক স্থিতি ইত্যাদিসহ মোট ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে মোট ৬১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার মোট ব্যয়ের পরিমাণ ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪৩ টাকা। ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৬১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ৮৬৯ টাকা।
ওই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে সজীব আহমেদ ওয়াজেদের গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ৫৪২ টাকা। অর্থাৎ সজীব আহমেদ ওয়াজেদ মোট ৬০ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭০ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, আসামি সজীব আহমদ ওয়াজেদ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অসৎ উদ্দেশ্যে অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সংগতিবিহীন ৬০ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭০ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। হুন্ডি বা অন্য মাধ্যমে অর্থ পাচার করে আমেরিকাতে দুটি বাড়ি, ৫৪ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ২৫৮ টাকায় ক্রয়/বিনিয়োগ করেন।
ওই ৫৪ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ২৫৮ টাকা বাংলাদেশের আয়কর নথিতে প্রদর্শন না করে দেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছেন। এ ছাড়া তিনি নিজ নামে ২টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজার ৫৭ টাকা লেনদেনসহ মোট ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৫ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনেরর ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে করা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুদক। ছয়টি মামলায় আসামি করা হয়েছে সাতজনকে।
তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের তহবিলে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত চলছে। ঘুষ হিসেবে গুলশানে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে করা পৃথক আরেকটি মামলার তদন্ত করছে দুদক।
এ ছাড়া গত ২৭ জুলাই শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। মামলায় ২ কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৩৫৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৯ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম