
উচ্চ কোলেস্টেরলকে অনেক সময় "নীরব ঘাতক" বলা হয়, কারণ এটি বছরের পর বছর কোনো লক্ষণ ছাড়াই শরীরে বাড়তে থাকে, যতক্ষণ না তা মারাত্মক হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের মতো জটিলতায় রূপ নেয়। তবে, শরীর মাঝেমধ্যে কিছু নিঃশব্দ সংকেত দেয়, যা চোখে দেখা গেলেও আমরা অবহেলা করে থাকি। নিচে এমন ৭টি দৃশ্যমান লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যা উচ্চ কোলেস্টেরলের ইঙ্গিত দিতে পারে।
১. চোখের পাতার পাশে হলদে চিটচিটে দাগ
চোখের পাতার ভেতরের কোনায় বা চারপাশে হলুদাভ চ্যাপ্টা দাগ দেখা গেলে তা হতে পারে
‘জ্যান্থেলাজমা’, যা মূলত শরীরে অতিরিক্ত এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল)-এর কারণে জমা হওয়া চর্বি। এটি ব্যথাহীন হলেও উচ্চ কোলেস্টেরলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত।
২. চোখের চারপাশে ধূসর বা সাদা রিং
চোখের কর্নিয়ার চারপাশে সাদা বা ধূসর বৃত্ত দেখা গেলে সেটিকে বলে ‘আর্কাস সেনিলিস’। বয়স বাড়ার সঙ্গে এটা স্বাভাবিক হলেও যদি ৪৫–৫০ বছরের আগেই এটি দেখা যায়, তবে তা উচ্চ কোলেস্টেরলের ইঙ্গিত হতে পারে।
৩. ত্বকে হলদে উঁচু গুটির মতো দাগ
হাত, পা, কনুই, হাঁটু কিংবা নিতম্বে যদি ছোট ছোট হলদে গুটির মতো দাগ দেখা যায়, তাহলে সেটা হতে পারে ‘জ্যান্থোমা’। এটি শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের কারণে চর্বি জমার ফল এবং বেশিরভাগ সময় বংশগত লিপিড সমস্যার সঙ্গে যুক্ত।
৪. টেন্ডনে ফোলাভাব বা শক্ত গাঁট
আকিলিস বা হাতের কনুইয়ের মতো জায়গায় টেন্ডনের ওপর শক্ত গাঁট দেখা গেলে তা ‘টেন্ডন জ্যান্থোমা’ হতে পারে, যা উচ্চ কোলেস্টেরলের আরেকটি চোখে পড়ার মতো লক্ষণ।
৫. ক্লান্তি, বুকের চাপ বা হাঁপানি
হৃদ্পিণ্ডে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে ক্লান্তি, বুকের চাপ (অ্যাঞ্জাইনা), কিংবা হালকা কাজেই শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো কোলেস্টেরলজনিত ধমনির ব্লকেজের কারণে হয়ে থাকে।
৬. আচমকা ঝিম ধরা, দুর্বলতা বা কথা জড়ানো
মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হলে তা ‘ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক আক্রমণ (টিআইএ)’ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করে। হঠাৎ করে শরীরের এক পাশ ঝিম ধরা, মুখ বেঁকে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা বা কথা জড়ানো হলে অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন যে ৩ খাবার নীরবে ধ্বংস করছে আপনার লিভার
৭. হাত–পায়ে ঠাণ্ডা লাগা, ঝিনঝিন বা ক্ষত সারতে দেরি
হাত বা পায়ে যদি বারবার ঠাণ্ডা লাগা, ঝিনঝিন করা, কিংবা কোনো কাটা-ছেঁড়ার ক্ষত দীর্ঘদিনেও না শুকায়, তবে সেটা হতে পারে ‘পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (পিএডি)’-এর লক্ষণ যা উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে হতে পারে।
অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষণ:
* ‘লিঙ্গোত্থানের সমস্যা’ রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে।
* ‘পিত্তথলির ব্যথা’ অতিরিক্ত কোলেস্টেরলে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে।
* ‘জয়েন্ট ব্যথা বা গাউট’ – কোলেস্টেরলের সঙ্গে সম্পর্কিত বিপাকজনিত অসাম্যতা।
* ‘মনে রাখা ও মনোযোগে সমস্যা’ – মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে দেখা দিতে পারে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম