
পাবলিক প্লেস সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করতে ধূমপানের স্থান করে দিচ্ছে। এতে তরুণরা ধূমপানে উৎসাহিত হবার পাশাপাশি অধূমপায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে ধূমপানের স্থান রাখার সুযোগ থাকায়, সিগারেট কোম্পানিগুলো এ সুযোগ নিচ্ছে। তাই পাবলিক প্লেসে ধূমপানের স্থান বন্ধ করা জরুরি। একজন নাগরিক রেস্টুরেন্টে যাবে খাবার খেতে সুস্থ্য সুন্দর পরিবেশে, কিন্তু সিগারেট কোম্পানিগুলো রেস্টুরেন্টগুলোকে ধূমপানের আস্তানা বানিয়ে দিচ্ছে। ফলে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের স্থান নয়, গাছ থাকা জরুরি বলে দাবি করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা।
তরুণদের ধ্বংসে সিগারেট কোম্পানির অপচেষ্টা সম্পর্কে সচেতন করতে আজ শনিবার (১২ জুলাই২০২৫) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামনে আয়োজিত এক বিশেষ বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণরা এই অভিমত তুলে ধরেন। “পাবলিক প্লেসে ধূমপানের স্থান নয়, গাছ লাগানোর আহবান” এই স্লোগানে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বৃক্ষরোপনের বার্তা তুলে ধরতেই এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, সিএলপিএ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ডাস, নাটাব, মানস, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, সেতু ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট।
কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তারা বলেন, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য পাবলিক প্লেসে “ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা” থাকায় ধূমপায়ীদের ধূমপানের ধোঁয়া আশেপাশেও ছড়িয়ে পড়ছে এবং পরোক্ষ ধূমপানে সংকাটাপন্ন করে তুলছে নারী-শিশুসহ সকলস্তরের জনগণকে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি), জাপান টোব্যাকো (জেটিআই) এ সকল স্থানে তাদের পণ্যের সাইন/লোগো, লাইটিংসহ রঙিন সজ্জিত বাক্সে প্রদর্শন করছে যা তরুণদের তামাকে আসক্ত করতে ঊৎসাহীত করছে। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুসারে, ৪৩.৯% অধূমপায়ী বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৯.৭% ঘটেছে বিভিন্ন রেঁস্তোরায়। ভয়েস নামক একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনেও এমন ধূমপানের স্থান তৈরিতে সিগারেট কোম্পানিগুলোর অর্থায়ন ও সম্পৃক্ততার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
বক্তারা আরো বলেন, পরিবেশ ধ্বংসকারী তামাক কোম্পানিগুলো আজকাল ‘বনায়ন কর্মসূচি’র আড়ালে পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠানের মুখোশ ধারণ করছে। এইসব তথাকথিত পরিবেশ সুরক্ষার উদ্যোগ তামাক কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণ করলেও সেই কর্মসূচিতে সাধারনত সেসকল বৃক্ষই রোপন করা হয় যা দ্রুত বর্ধনশীল এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। একই সাথে তারা পাহাড়, চাষযোগ্য জমি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে তামাক চাষকে উৎসাহিত করছে, যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য উভয়ের জন্য মারাত্মক হুমকি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসময় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এই প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান।
বক্তারা আরও বলেন, পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধের বিষয়টি আইন দ্বারা নির্ধারিত থাকলেও, বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধানটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় বাঁধা হিসেবে কাজ করছে। এই ধারা বাতিল না করা পর্যন্ত পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা সম্ভব নয়। বরং ‘ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান’ নির্ধারণ করে একটি বিধান রেখে পরোক্ষ ধূমপানকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, যা ২০০৫ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন এবং সরকারের তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষমাত্রা অর্জনে বড় প্রতিবন্ধকতা।
বৃক্ষরোপন র্কমসূচি অনুষ্ঠানে আয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।