
সিগারেটের চার স্তরের কর হার একই হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবে সিগারেটের মূল্য স্তরের ব্যবধান বেশি হওয়ায় ব্র্যান্ড সুইচ বেড়ে যাচ্ছে, বাজেট প্রস্তাবে ‘তদুর্ধ্ব’ শব্দের অপব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকিও বাড়ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবীদ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট মার্চ ২০২৫) সকাল সাড়ে ১০টায় ‘অনন্য কর হার : রাজস্ব আদায়ে প্রভাব’ শীর্ষক এক জিম্পোজিয়ামে তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর ট্যোবাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে।
সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য, তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, গত ৯ জানুয়ারি সিগারেটের সব স্তরে একই কর হার নির্ধারণ করে দেয়ার পর উৎপাদন কমলেও সরকারের রাজস্ব বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বহুজাতিক কোম্পানি বিএটিবি, জেটিআই ও আবুল খায়ের কোম্পানির কাছ থেকে সিগারেট থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৭,৯১৬ কোটি টাকা। যেটা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯,৫৯৩ কোটি টাকা। অথচ সিগারেটে কর হার ও মূল্য বৃদ্ধিতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে তামাক কোম্পানি প্রচারণা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একটি বহুজাতিক কোম্পানির আর্থিক ব্যয়ের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তারা নিজেচের পরিচালন ব্যয় বেশি দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। একইসঙ্গে তামাক কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে বছরে প্রতি বছর প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ফলে বর্তমানে তামাক কর কাঠামো আধুনিকীকরণের কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য প্রাথমিকভাবে প্রতি শলাকা সিগারেটে ১ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট করারোপ করতে হবে। কারণ মিক্সপদ্ধতিতে গেলেও সরকারের প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে পলিসি ও নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের পাশাপাশি পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে তামাকপাতা রপ্তানিতেও ২৫% শুল্ক পূণঃবহাল করা জরুরি। কারণ রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করার পর দেশে হু হু করে তামাক চাষ বাড়ছে। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাংলাদেশেই সবচেয়ে সস্তায় তামাক পাতা বিক্রি হচ্ছে।
সিম্পোজিয়ামে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক, বিইআরের তামাক কর প্রকল্পের ফোকাল পার্সন ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির কনভেনর অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, তামাক কোম্পানির যত মিথ ও কূটকৌশল আছে সবই এখন প্রকাশ্যে। জনস্বাস্থ্য সুক্ষায় ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে তামাকজাত দ্রব্যের শুধু দাম বাড়ালে হবে না, কর হারও বাড়াতে হবে। আবার কর হারের সঙ্গে দাম বাড়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। দুটির সমন্বয় না থাকলে কার্যকর ও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশে জর্দা ও গুলের দাম অনেক কম। অন্যদিকে তদুর্ধ্ব শাব্দের কারণে সিগারেটের অংখ্য মূল্য থাকায় ব্র্যান্ড সুইচ হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকিও বাড়ছে। এজন্য সুনির্দিষ্ট করারোপের পাশাপাশি একটি জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করা জরুরি।
সিম্পোজিয়ামে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, বিইআরের প্রকল্প পরিচালক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল এবং সঞ্চালনা করেন বিইআরের সিনিয়র প্রজেক্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহীম খলিল। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকগণ অংশগ্রহণ করেন।