রোববার,

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

৫ আশ্বিন ১৪৩২

রোববার,

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

৫ আশ্বিন ১৪৩২

Radio Today News

অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত 

দেশে তিনজন স্নাতক পাশের একজন বেকার: বিবিএসের জরিপ

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Google News
দেশে তিনজন স্নাতক পাশের একজন বেকার: বিবিএসের জরিপ

দেশে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন স্নাতকই এখন বহন করছেন বেকারত্বের অভিশাপ। যা গেলো আট বছরে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিবিএসের সবশেষ শ্রমশক্তি জরিপে উঠে আসা তথ্য বলছে, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মহীন বসে থাকা তরুণের সংখ্যা ১৭ ভাগ। যাকে অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত হিসাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এভাবে আপনমনে বসে আছেন বছর দুয়েক আগে স্নাতক পাস করা শারমিন আক্তার তৃষা। দিনের অধিকাংশ সময়টাই তার কাটে বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে। পছন্দসই কোথাও আবেদন করলে মেলে না সাড়া। আবার চাকরি মিললেও, তাতে মেটে না জীবনযাত্রার ব্যয়। ফলে, সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি সম্ভ্যাব্য সব জায়গায় আবেদন করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে পাস এই ছাত্রী। তবুও, মুক্তি মিলছে না বেকারত্বের গ্লানি থেকে।

শারমিন আক্তার তৃষা বলেন, আমার অনুযায়ী আমি সেরকম জব পাচ্ছি না। কিংবা আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন পাচ্ছি না। আমি যে সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছি সেটা নিয়ে চাকরির সুযোগটা কম কিংবা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে। 

বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২০ হাজার। বছর ব্যবধানে বেড়েছে দেড় লাখেরও বেশি। এই সময়ে আশংকাজনকহারে বেড়েছে তৃষার মতো শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। বিবিএসের হিসাবে, দেশে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন স্নাতকই এখন বহন করছেন বেকারত্বের অভিশাপ। যা গেলো আট বছরে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যাকে দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত বলছেন বিশ্লেষকরা।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, আমার মনে হয় বিগত এক বছরে এই সংখ্যাটা সম্ভবত আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ এই সময়ের মধ্যে অর্থনীতির গুণগত পরিবর্তন তেমন একটা হয়েছে বলে তো মনে হয় না। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিন্তু একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।  

ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেন, শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বেকারত্ব যে কি ভয়াবহ সেটাই দেখাচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষিত মানুষরা অনেক বেশি বেকার থাকছেন। তারা অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। এই কাজ না খুঁজে পাওয়ার কারণ ইন্ডাস্ট্রির যে ধরণের রিকোয়ারমেন্ট সে রকম অনুযায়ী আমরা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারিছ না। 

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম কারণ ছিলো কর্মসংস্থান ঘাটতি। তবে, এই সময়ে নানামুখী সংস্কার হলেও, অবস্থার উন্নতি হয়নি কর্মসংস্থানের। ফলে, স্নাতক পাস করে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেকার বসে আছেন ১৭ শতাংশেরও বেশি তরুণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে চাকরি বাজারের মিল না থাকায় বাড়ছে এই সংকট। যা সমাধানে দ্রুত সরকারকে উদ্যোগি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে বাড়তি মনোযোগের তাগিদ দেন তারা।

ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এ গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, উদ্বেগের মতো চিত্র আমরা পেলাম। এখান থেকে আমাদের কাজের জায়গাটা তৈরি করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি একাডেমি লিকেজের মধ্যে একটা বিষয় আছে, সেটা হচ্ছে শুধুমাত্র তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করলেই হবে না। বরং তাদের পরামর্শ নিয়ে খুব দ্রুত আমাদের কারিকুলামটা পরিবর্তন করতে হবে। 

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক আরও বলেন, সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগ পরিস্থিতি, উৎপাদন পরিস্থিতি এটা যদি বৃদ্ধি না পায় তাহলে তো কর্মসংস্থান দেশে বৃদ্ধি পাবে না। 

বিবিএসের হিসাবে, দেশে বছর ব্যবধানে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে ১৭ লাখেরও বেশি।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের