জাতীয় নির্বাচন স্থগিত চাওয়া রিট খারিজ

সোমবার,

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫,

২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

সোমবার,

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫,

২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

Radio Today News

জাতীয় নির্বাচন স্থগিত চাওয়া রিট খারিজ

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
জাতীয় নির্বাচন স্থগিত চাওয়া রিট খারিজ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি উল্লেখ করে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

রিটকারী আইনজীবী মো. ইয়ারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুনানি ছাড়াই রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি উল্লেখ করে খারিজ করা হয়েছে। আমিই চেয়েছিলাম।

কেন চেয়েছিলেন, জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘আদালত বলেছেন, দেশ এখন নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের এই সময়ে আপনার রিট আবেদনটি উপযোগী না। তখন মেরিটে (রিট আবেদনের বিষয়বস্তুতে) না গিয়ে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রিট আবেদনটি নট প্রেসড (উত্থাপিত হয়নি) করে নিয়েছি।’
আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম নিবিন্ধিত রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ কংগ্রেস’-এর মহাসচিব।

দলের পক্ষে গত ৩ ডিসেম্বর তিনি এই রিট করেছিলেন।

বিদ্যমান নির্বাচনীব্যবস্থায় জেলা প্রশাসককে (ডিসি) রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন স্থগিত চাওয়ার পক্ষে রিটে বলা হয়েছিল, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন ও পরিচালনা করবে। আর নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেবে নির্বাহী বিভাগ।

কিন্তু কমিশনের নিজস্ব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থাকার পরও নির্বাচনের সময় ডিসিকে রিটার্নিং অফিসার ও ইউএনওকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এর ফলে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পরিবর্তে ডিসি ও ইউএনওকে রিটার্নিং অফিসার-সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং অবৈধ।

রিটে বলা হয়, ডিসি ও ইউএনওরা নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা ও সরকারের প্রতিনিধি। তাদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কারণে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, ব্যালট পেপার ছাপানো, ব্যালট বাক্স প্রস্তুত এবং সরবরাহ করা ছাড়া নির্বাচন পরিচালনায় কার্যত কমিশনের কিছুই করার থাকে না।

তা ছাড়া নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নির্বাচন কমিশনে আসা কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে কোনো ব্যাবহারিক অভিজ্ঞতা থাকে না। নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রেষণে এনে কমিশনে নিয়োগ দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যে কারণে নির্বাচন কমিশনকে তার নিজস্ব দক্ষ, অভিজ্ঞ জনবল তৈরির জন্য জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা উচিত।

রিটে আরো বলা হয়, বিচার বিভাগের মতই নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন আছে। সম্প্রতি বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয়ের অধ্যাদেশ জারি করার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিচার বিভাগীয় সচিবালয় নিজস্ব জনবল, অর্থাৎ বিচার বিভাগ থেকেই সচিব নিয়োগ করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নির্বাহী বিভাগ থেকে সচিব নিয়োগ করে, যা কমিশনের সংবিধান প্রদত্ত স্বাধীনতার পরিপন্থী। এ কারণে কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য একটি ইলেকটোরাল সার্ভিস কমিশন থাকা আবশ্যক। নইলে নির্বাচন কমিশন সব সময়ই নির্বাহী বিভাগের অধীন হয়ে থাকবে। তাই নির্বাচন কমিশনকে সচিবসহ নিজস্ব জনবল নিয়োগের জন্য একটি ‘ইলেকটোরাল সার্ভিস কমিশন’ গঠনের নির্দেশ দেওয়া উচিত।

এসব যুক্তির আলোকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ডিসি-ইউএনও নিয়োগ না দিয়ে জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে রুল চাওয়া হয়েছির রিটে। একই সঙ্গে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি পদোন্নতির ব্যবস্থা করে জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশন সচিব নিয়োগ না দিয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিব নিয়োগ দেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে মর্মেও রুল চাওয়া হয়। আর প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট যদি হাইকোর্ট রুল জারি করেন, তবে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব স্থগিত করতে নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের