নির্বাচনে পোস্টার মানা, প্রার্থীরা আর যা যা করতে পারবেন না

মঙ্গলবার,

২৩ ডিসেম্বর ২০২৫,

৯ পৌষ ১৪৩২

মঙ্গলবার,

২৩ ডিসেম্বর ২০২৫,

৯ পৌষ ১৪৩২

Radio Today News

নির্বাচনে পোস্টার মানা, প্রার্থীরা আর যা যা করতে পারবেন না

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
নির্বাচনে পোস্টার মানা, প্রার্থীরা আর যা যা করতে পারবেন না

এক সময় বাড়ির বাইরে দেয়ালে, রাস্তায়, বাজারে যেদিকে চােখ যায় সবদিকে প্রার্থীদের নাম-দল-মার্কাওয়ালা পোস্টারে ছেয়ে যাওয়া দেখলেই বােঝা যেত দেশে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ভােটারের কাছে প্রার্থীর পরিচয় ও যােগ্যতা তুলে ধরার অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচিত হয় পোস্টার। কিন্তু আসছে ১২ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আচরণবিধিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে নির্বাচন কমিশন বা ইসি।

ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণায় কোনো ধরনের পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না প্রার্থীরা। লিফলেট আর ব্যানারে থাকতে পারবে না প্রার্থী ও দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কারো ছবি, প্রচারণায় ব্যবহার করা যাবে না হেলিকপ্টার।

তবে রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হলে শুধু তারাই পারবেন হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে।

এবার প্রথমবারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নির্বাচনের প্রচারণায় যেমন বেশ কিছু ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তেমনি প্রথম বারের মতো এক টেলিভিশন সংলাপেরও আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন।

এসব পরিবর্তন আগেই এনেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে, তফসিল ঘোষণার পর এবার আইন মানতে বেশ কঠোরতাও দেখাচ্ছে সংস্থাটি।

এরই মধ্যে বিধি ভেঙে দেশের কয়েকটি জায়গায় প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পর বিভিন্ন জনকে জরিমানাও করেছে ইসি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও অনুসরণ করে গত বছরের নভেম্বরে 'রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা' চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন।

পোস্টার-ব্যানারে বিধি নিষেধ যে কারণে

রাস্তার মোড়ে মোড়ে, গলির মাথায় কিংবা গাছে গাছে পোস্টার যেন বাংলাদেশের নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল না কখনোই।

গত ১০ই নভেম্বর রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধিতে সংশোধন এনে গেজেট জারি করে ইসি।

নতুন আচরণবিধিতে বলা হয়, আগামী নির্বাচন থেকে ভোটের প্রচারণায় রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা কোনও ধরণের পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না।

ফলে এবারই প্রথমবারের মতো পোস্টার ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা চলতে যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা বিধিমালা চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত নিয়েছি। একটি মাত্র রাজনৈতিক দল বাদে বাকি কােন দলই এ নিয়ে কোন আপত্তি জানায় নি"।

তিনি জানান, নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার নিয়ে এর আগেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ প্রদান করেছিল, সেখানে তারা পোস্টার নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছিল।

তবে, কেন হঠাৎ করে নির্বাচনের প্রচারণায় পোস্টারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার একটা ব্যাখ্যাও মিলেছে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে।

ইসি সচিব বলেছেন, "নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। পোস্টার ছাপা হলে প্রার্থীরা সেটিকে লেমিনেটিং করে, সেগুলো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পোস্টারের কালি ফসলের মাঠে ক্ষতি করে সব মিলিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী নির্বাচনে কেউ পোস্টার ব্যবহার করতে পারবে না"।

তবে, পোস্টারের ব্যবহার বন্ধ করলেও প্রার্থীরা লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফেস্টুন ব্যবহার করতে পারবেন।

সংশোধিত আচরণবিধি অনুযায়ী এসব প্রচারণা সামগ্রী, কোনো দালান, দেওয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি, সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনাসমূহে কিংবা কোন যানবাহনে লাগানাে যাবে না।

নির্বাচনী প্রচারণা পত্র, বিলবোর্ড বা ফেস্টুনে রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কারো ছবি ব্যবহার করতে পারবে না।

ইসি সচিব বলেন, "অনেক সময় একজনের পোস্টারের ওপর আরেকজনের পোস্টার লাগানোর বিষয়টি নিয়েও নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়। নানাদিক বিবেচনা করে আমরা আচরণবিধিতে পরিবর্তন এনেছি আমরা"।

প্রচারণায় যানবাহনের ব্যবহার সীমিত

গত ১১ই ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল ঘোষণার পর প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ নেই।

কিন্তু নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করে তফসিল ঘোষণার পর বিশাল মোটরসাইকেল বহর ও গাড়িবহর নিয়ে শোডাউন করেছিলেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাজমুল মোস্তফা আমিন।

এরপর গত ১৩ই ডিসেম্বর ওই প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমরা তাকে সতর্ক করেছিলাম। তারপরও একই অপরাধ উনি দুইবার করেছেন। যে কারণে নির্বাচন কমিশন আইনের প্রয়োগ করেছে।

ইসির সংশোধিত আচরণবিধিমালায় যানবাহন ব্যবহার করে প্রচারণার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণায় কোনো বাস, ট্রাক, নৌযান, মোটরসাইকেল কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক বাহন সহকারে কোনো মিছিল, জনসভা কিংবা কোনরূপ শোডাউন করা যাবে না।

নির্বাচনি প্রচারে যানবাহন সহকারে কিংবা যানবাহন ব্যতীত কোনো ধরনের মশাল মিছিলও করা যাবে না।

সংশোধিত আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কেউ হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করতে পারবেন না।

এছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো প্রকার মিছিল কিংবা শোডাউন করা যাবে না। যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা চলার সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতর কোন ধরনের যান চলাচল করতে পারবে না।

নির্বাচন কমিশন বলছে, আচরণবিধির এ সব ধারা ভাঙলে প্রার্থীদের আর্থিক দণ্ড দিতে পারে কমিশন। কখনো কখনো বাতিল হতে পারে প্রার্থিতাও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিধি নিষেধ

নির্বাচনী প্রচারণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ধারা যুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।

সংশোধিত আচরণবিধিমালায় বলা হয়েছে, কোন প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট বা দল বা প্রার্থী সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম, একাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ অন্যান্য সনাক্তকরণ তথ্যাদি উক্তরূপে প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করবেন।

প্রার্থী তার প্রচার-প্রচারণাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ব্যবহার করতে পারবেন না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণা বা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, ভুল তথ্য, কারো চেহারা বিকৃত করা ও নির্বাচন সংক্রান্ত বানোয়াট তথ্যসহ কোনো রকম ক্ষতিকর কন্টেন্ট তৈরি ও প্রচার করতে পারবেন না কোন প্রার্থী।

ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে নিয়ে ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার করতে পারবেন না বলেও বলা হয়েছে বিধিমালায়।

একই ভাবে ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহার করা হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড করতে পারবেন না।

সত্যতা যাচাই ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কনটেন্ট শেয়ার ও প্রকাশ করা যাবে না বলেও বলা হয়েছে আচরণবিধিমালায়।

সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, ভোটারদের বিভ্রান্ত করিবার জন্য কিংবা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোনো প্রার্থী বা ব্যক্তির চরিত্র হনন কিংবা সুনাম নষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে, সাধারণভাবে বা সম্পাদনা করে বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কোনো মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, পক্ষপাতমূলক, বিদ্বেষপূর্ণ, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ এবং মানহানিকর কোনো কন্টেন্ট বানানো যাবে না।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, আমরা আইনের প্রয়োগের বিষয়ে সর্তক। যিনিই আচরণবিধিমালা ভাঙবেন তার ভিত্তিতে আমরা আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সূত্র: বিবিসি বাংলা

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের