শুক্রবার,

০২ মে ২০২৫,

১৯ বৈশাখ ১৪৩২

শুক্রবার,

০২ মে ২০২৫,

১৯ বৈশাখ ১৪৩২

Radio Today News

‘নারী কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের পথে হাঁটলে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে’

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ১ মে ২০২৫

আপডেট: ২৩:৫৯, ১ মে ২০২৫

Google News
‘নারী কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের পথে হাঁটলে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে’

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সমাজ ভাঙনের ভয়াবহ যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা যদি কার্যকর হয় বা সরকার যদি সেদিকে পা বাড়ায় তাহলে দেশের মধ্যে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে। বুধবার গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এ মন্তব্য করেন। 

কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবনার বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারী সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনা প্রদান করেছে সে বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিস্কার; আমরা পুরো প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছি। এতে পুরো প্রতিবেদনকেই প্রত্যাখানযোগ্য মনে হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এটাকে আমরা ধৃষ্টতাপূর্ণ প্রতিবেদন বলে চিহ্নিত করেছি। সব ইসলামী সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিন্ন ভাষায় এর নিন্দা জানানো হয়েছে। শুধু প্রস্তাবনা নয়, এই জাতীয় প্রস্তাবনা উপস্থাপনের দায়ে আমরা নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এটাই আমাদের পরিস্কার অবস্থান।

প্রতিবেদনের বিরোধিতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ  প্রতিবেদনের বিরোধিতা এজন্য করছি যে, এ প্রতিবেদন পুরোটাই সরাসরি কোরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শুধু সাংঘর্ষিক নয়, বরং কোরআনকে কটাক্ষ করা হয়েছে প্রস্তাবনা। দ্বিতীয়ত, আবহমানকাল থেকে আমাদের দেশে পরিবারভিত্তিক যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এই প্রতিবেদনের সুপারিশ তার বিপরীত। এই প্রতিবেদনের সারকথা হলো- আমাদের এই সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে পাশ্চাত্যের ন্যায় পরিবারবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

এই প্রতিবেদনের আরেকটি মূল লক্ষ্য হলো, তারা সমাজে সমকামীতার বৈধতা দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। দেশের নারী সমাজকে বেহায়াপনার দিকে ধাবিত করার এবং পতিতাবৃত্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ঘৃণ্য মানসিকতা প্রতিফলিত হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনের প্রস্তাবনা তুলে ধরে মামুনুল হক বলেন, কমিশন তার প্রতিবেদনে উত্তরাধিকার আইনকেই কটাক্ষ করেছে। তারা নারী-পুরষের সমান অংশের কথা বলেছেন। কিন্তু এর সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত।

এক্ষেত্রে তারা একচোখা নীতি অবলম্বন করেছেন। এখানে উত্তরাধিকার বিষয়টা একমাত্র বিষয় নয়; এছাড়া পরিবার, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের লালন পালন- এই জাতীয় বিষয়গুলো এবং বিবাহের ক্ষেত্রে সব ধর্মের জন্য তারা অভিন্ন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন। 
তিনি আরো বলেন, বিবাহ-বন্ধন কেবল রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কোনো বিষয় নয়। এটা স্পষ্টতই ধর্মীয় একটি বিষয়। ধর্মীয় ভাবেই বিয়ে ও বিচ্ছেদের পদ্ধতি আছে। এটা তো কোনো মানুষ বা রাষ্ট্রের নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয় নয়। রাষ্ট্র শুধুমাত্র যেটা করতে পারে তা হলো- ধর্মীয় বিধানগুলো কিভাবে অনুসৃত হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা।

তিনি বলেন, ইসলামের বিধানগুলো আল্লাহর কোরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। উত্তরাধিকার কিভাবে বণ্ঠিত হবে তা কোরআনের আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা আছে। এ ধরনের বিধানকে সরাসরি বিকৃত বা পরিবর্তন করার প্রস্তাবনা মুসলমানরা মেনে নিতে পারে না। 

হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ও কমিশনকে বাতিল এবং আরো ৩ দাবি সহ মোট ৪ দাবিতে আগামী ৩ মে সকাল ৯ টা থেকে হেফাজতের ডাকে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই দাবির সঙ্গে দেশের সকল ইসলামপন্থী মানুষ একমত। এটা সকলের অভিন্ন দাবি। আমরা আশা করিছ, সমাবেশে হেফাজতের বাইরেও সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ এমনকি ধর্মবিরোধী নন এমন মানুষেরাও যোগ দেবেন।

তিনি বলেন, সমাজ ভাঙনের ভয়াবহ যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে তা যদি কার্যকর হয়, বা সরকার যদি সেদিকে পা বাড়ায় তাহলে দেশের মধ্যে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ এদেশের মুসলমানরা এখনও এতটা নির্জীব হয়ে যায়নি যে, এভাবে কোরআনকে কটাক্ষ করার পরও তারা বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিবে।

তিনি আরো বলেন, এই প্রস্তাবনায় সরাসরি বলা হয়েছে নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রধান কারণ হলো ধর্মীয় বিধান। যেখানে সরাসরি আল্লাহর কোরআনে বলা হয়েছে- কোরআন নাজিল হয়েছে সমাজের বৈষ্যম্য দূর করে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য। এখানে কোরআনের দর্শন বোঝার বিষয় আছে। আমরা মনে করি যাদেরকে প্রস্তাবনার জন্য কমিশনে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা একপেশে কিছু মানুষ; যারা বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব কোনোভাবেই করেন না; তারা সবাই পশ্চিমা জীবন ধারায় প্রভাবিত; এনজিও এবং বিদেশি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত, বাংলাদেশের নারী সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদেরকে দিয়ে কমিশন গঠন করায় তারা এই বিকৃত প্রস্তাবনা দাখিল করেছেন। কাজেই এটার বিষয়ে ৩ মে মহাসমাবেশে বড় ঘোষণা আসবে। আমরা কোনোভাবেই এটাকে বাস্তবায়ন হতে দেব না, আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করব। 

হেফাজত নেতা বলেন, আমরা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক পরিচয়ে আহ্বান জানাচ্ছি না। হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সামাজিক এবং ধর্মীয় অনূভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল সকল শ্রেণীর নাগরিকদের সমাবেশে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের