প্রশাসনের ৭০-৮০ ভাগ লোক একটি বিশেষ দলের দখলে: জামায়াত

বৃহস্পতিবার,

২৩ অক্টোবর ২০২৫,

৮ কার্তিক ১৪৩২

বৃহস্পতিবার,

২৩ অক্টোবর ২০২৫,

৮ কার্তিক ১৪৩২

Radio Today News

প্রশাসনের ৭০-৮০ ভাগ লোক একটি বিশেষ দলের দখলে: জামায়াত

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

Google News
প্রশাসনের ৭০-৮০ ভাগ লোক একটি বিশেষ দলের দখলে: জামায়াত

বিএনপি, এনসিপির পর জামায়াতে ইসলামীও অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াত অভিযোগ করছে, প্রশাসনের ৭০-৮০ ভাগ লোক একটি বিশেষ দলের দখলে। কয়েকজন উপদেষ্টাও ঝুঁকে রয়েছেন সেই দলের দিকে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলের প্রতি অনুগত কর্মকর্তাদের সরাতে সরকারপ্রধানের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা।

বুধবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ অবস্থান তুলে ধরে জামায়াত। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন জামায়াতকে। নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যে কোনো রদবদল তিনি নিজেই তদারকি করবেন।

যমুনা থেকে বেরিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েকজন উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তবে তারা কারা, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ‘প্রথম দিন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা প্রথম দিন গিয়েই অপসারণ চাইনি। আমরা বলছি, সময় দিচ্ছি। যদি কাজ না হয়, তাহলে আমাদের যা করণীয়, সেগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করব।’

ডা. তাহের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, সব নয়, কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনাকে বিভ্রান্ত করেন। আপনার প্রতি জামায়াতের আস্থা রয়েছে। কিন্তু আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) কিছু লোক কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করেন বলে জামায়াত মনে করে। তাদের ব্যাপারে আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) হুঁশিয়ার থাকা দরকার।’

প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেছেন, ‘সচিবালয়ের ৭০-৮০ ভাগ কর্মকর্তা একটি বিশেষ দলের।’ তিনি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, বিচার বিভাগের ৬৫ ভাগ একটি দলের। মানে একটি দল ৬৫ ভাগ আর সারাদেশ ৩৫ ভাগ।

নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ডা. তাহের বলেছেন, তাদের কাছে গেলে শুনতে হয়, প্রচণ্ড চাপে আছেন। একই দল থেকে সেই চাপ আসছে। পুলিশেও একই অবস্থা। এ অবস্থায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। জামায়াত বলেছে, সরকার তত্ত্বাবধায়কের মতো থাকুক। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যেখানে প্রয়োজন, রদবদল করতে। প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন– এ প্রশ্নে ডা. তাহের বলেন, সরকারপ্রধান বলেছেন, তিনি নিজেই তদারকি করবেন। লটারির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের পদায়ন করবেন। এতে জামায়াতের আপত্তি নেই। 

আগের দিন যমুনায় বৈঠকের পর বিএনপি বলেছিল, অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো হতে হবে। ডা. তাহের এ বিষয়ে বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হচ্ছে। 

জামায়াত সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোনো ব্যত্যয় না হলে, অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, উনি এগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছেন এবং যা করণীয়, তা করবেন।’ 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে ঐকমত্য হলেও সময় নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বিএনপি নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে চায়। জামায়াত গণভোট নভেম্বরের মধ্যে চায়। ডা. তাহের বলেন, একটি জটিলতা সৃষ্টি করছে। বিএনপি প্রথমে গণভোটে রাজি ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে। এখন তারা জটিলতা তৈরি করছে একই দিনে গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন দাবি করে। দুটি একেবারে আলাদা জিনিস। জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করবেন। আর গণভোটে জনগণ সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। কোনো গোঁজামিল বুঝি না, নির্বাচনের আগেই নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে। 

বিএনপি বলছে, বিদ্যমান আইনের অধীনে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করা সম্ভব। জামায়াত বলছে, সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হবে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে দলটি এই প্রসঙ্গ তোলে। ডা. তাহের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তিনিও একমত হয়েছেন, বাস্তবায়ন না হলে সংস্কারের জন্য এত পরিশ্রম পণ্ডশ্রম হবে। যথাযথ উদ্যোগের আশ্বাস দিয়েছেন সরকারপ্রধান। 

জামায়াত নায়েবে আমির বলেছেন, আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। তা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। জুলাই সনদ সংবিধান নয়, বরং ‘এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’। গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকার এ ধরনের আদেশ জারির এখতিয়ার রাখে। প্রধান উপদেষ্টা একমত হয়েছেন, আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অধ্যাদেশ জারির বিরোধিতা করছে জামায়াত। দলটির নায়েবে আমির বলেন, ‘অধ্যাদেশ খুব দুর্বল। সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার ক্ষমতা অধ্যাদেশের নেই। আর আদেশ সংবিধানের সমান।’ 

এনসিপির মতো জামায়াতও দাবি তুলেছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত রাষ্ট্রপতি নয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকার আদেশ জারি করবে। ডা. তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, আইন-কানুন দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। 

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের