আবদুল আলীম
তাঁর হৃদয়গ্রাহী সুরের ঝংকারে যেন জেগে ওঠে ফুল, পাখি, নদী আর লোকায়ত গ্রাম বাংলা। প্রবাদ প্রতিম কালজয়ী এই লোকসংগীত শিল্পী আব্দুল আলীম।
বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় মহীরুহ আবদুল আলীম। মানুষের মনের কথা প্রাণের সাথে প্রাণ মেলানো যে গানের সুর তাঁর দরাজ কন্ঠ থেকে নিঃসৃত হতো তা আজও বাংলার গনমানুষকে আপ্লুত করে, মোহিত করে। কণ্ঠস্বরের অসাধারণ ঐশ্বর্যের অধিকারী এই অপ্রতিদ্বন্দী সংগীত শিল্পী ; ১৯৭৪ সালে সুজন সখী সিনেমার ‘সব সখীরে পার করিতে’ গানটিতে কন্ঠ দিয়ে অর্জন করেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
ছেলেবেলা থেকে গানের প্রতি অনুরাগী আব্দুল আলীম গ্রামে বিভিন্ন পালা পার্বনে গান গেয়ে আসর মাতিয়ে রাখতেন। সেই সময়ই সঙ্গীত শিক্ষক সৈয়দ গোলাম ওলীর কাছে তালিম নিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এবং কানাই শীলের কাছে সংগীতের তালিম নেন তিনি। ১৯৪৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই প্রথম গানের রেকর্ড করে বিষ্ময়ের জন্ম দেন ক্ষণজন্মা এই শিল্পী।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে রেডিওতে যোগ দেন, আবদুল আলীম। পরে টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও সঙ্গীত পরিবেশন করেন তিনি। তবে পেশাগত জীবনে ঢাকার সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন আব্দুল আলীম।
বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ সহ প্রায় একশ’টি চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দিয়েছেন আব্দুল আলীম। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, লালন ফকির সিনেমার গান। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচশ’টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তাঁর। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর একুশে পদক সহ বেশকিছু সম্মাননা অর্জন করেন, এই কিংবদন্তি শিল্পী। প্রজন্মের নতুন সব শিল্পীরাও সুরের সাম্পান ভাসাচ্ছেন তার কালজয়ী গানের কথায়।
১৯৩১ সালের ২৭শে জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সাধারণ এক মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া গণমানুষের এই প্রিয় শিল্পী অমরতার পথে পাড়ি জমান, ১৯৭৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। নিজ কীর্তির কারণে পল্লীগীতির মতোই তাঁর নামটি নিত্যদিন সুরেলা ঝংকার তোলে বাংলার সবুজাভ হৃদয়ে।
রেডিওটুডে নিউজ/জেএফ