বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

২৫ এপ্রিল ২০২৪,

১২ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

মিথ্যা অভিযোগে শাস্তি, খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Google News
মিথ্যা অভিযোগে শাস্তি, খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু

স্কুল কমিটির সভাপতি ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে সংর্বধনার মিথ্যা অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মোর্শেদকে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা। এখবর শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওই শিক্ষক। তবে পরিবারের দাবী, দুইদিনের মধ্যে তড়িঘড়ি ও কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে এই শাস্তি দেয়া হয়। শান্তির বিষয়টি শুনে মারা যান তিনি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির চান তারা। 

এলাকাবাসী জানান, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্বচররুহিতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সহিত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন আনোয়ার হোসেন মোর্শেদ। ২৬ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মাহফুজুরর্ হমান পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২১ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে যান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। তখন সরকারি বিধি নিষেধ মেনে বিদ্যালয়ে সমাবেশ ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা হচ্ছিলো। এই সমাবেশকে সংবর্ধনা সভা বানিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুনছুর আলী চৌধুরী সহকারি শিক্ষকদের কাছ থেকে ২৫ জানুয়ারি একটি অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে। 

সে অনুযায়ী প্রধান শিক্ষককে  কোন শোকজ নোটিশ না দিয়ে ২৭ জানুয়ারী বিদ্যালয়ে যান উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ। ওইদিনেই বিদ্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পরেন প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মোর্শেদ। পরেরদিন পরিবারের সদস্যরা প্রধান শিক্ষককে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যান। এর মধ্যে দুই কার্যদিবসের মধ্যে ৩১ জানুয়ারি বিকেলে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। 
এখবর শুনে রাত ৮টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতাল মারা যান তিনি। এতে সরকারী কোন নিয়মনীতি মানা হয়নি। নিজের মনগড়াই প্রধান শিক্ষককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আনোয়ার হোসেন মোর্শেদকে।

নিহতের বড় ছেলে জামিল মাহমুদ বলেন, আত্নপক্ষ সমর্থন ও কোন কারন দশানো নোটিশ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে মিথ্যা ঘটনাকে সত্য বানিয়ে পরিকল্পিতভাবে প্রতিবেদন তৈরি করে বাবাকে শাস্তি দেয়া হয়। এখবর শুনে হাসপাতালে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মারা যান তিনি। এঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন ছেলে জামিল মাহমুদ।

মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাইস অভিযোগ করে বলেন, বাবা (প্রধান শিক্ষক) মানষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন তারা। যেন এইভাবে আর কোন পিতাকে হারাতে না হয়। উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন অফিসে বড় বোনকে ডেকে নিয়ে জোর করে বাবার বরখাস্তের আদেশ ও বিষয়টি জানাতে বাধ্য করেন। বরখাস্তের বিষয়টি শুনে জ্ঞান হারিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে যান বাবা।

সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও শাকচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, আনোয়ার মোর্শেদ ছিলেন ভালো মানের একজন প্রধান শিক্ষক। তার এইভাবে মৃত্যু হবে,সেটা কল্পনা করা যায়না। মিথ্যা কল্পকাহিনী তৈরি করে তাকে শাস্তি দেয়া আইন সংগত হয়নি। এটিকে একটি হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। এর আগেও জেলা শিক্ষাকর্মকর্তার মানষিক নির্যাতনে আরো দুই শিক্ষক হৃদক্ষিয়া বন্ধ হয়ে এইভাবে মারা যান। এই শিক্ষাকর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সাথে অসদাচরন করার অভিযোগ করেন তারা। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে বিচারের চান সহকর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। এঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, চেয়ারম্যানকে কোন সংবর্ধনা দেয়া হয়নি। উল্টো প্রধান শিক্ষককে এই শাস্তির বিষয়টি লজ্জাজনক। এটি কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের নিকট জোরদাবী করেন তিনি।

আর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও  জজকোর্টের আইনজীবি  রহমত উল্যাহ বিপ্লব বলেন, যেভাবে প্রধান শিক্ষককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এটি আইনগতভাবে হয়নি। কাউকে শাস্তি দেয়ার আগে তাকে একাধিকবার কারন দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু এখানে সেটা মানা হয়নি। এটি অন্যায় হয়েছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ার হোসেন মোর্শেদের বিরুদ্ধে তার সহকর্মীরা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ দিয়েছেন। সে অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হয়। সে আলোকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুনছুর আলী চৌধুরী বলেন, অভিযোগের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি দুঃখজনক ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। এছাড়া এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা দেয়ার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
 

রেডিওটুডে নিউজ/ইকে

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের